রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভ থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করেছেন।
এই ফোনালাপটি আসে তথাকথিত ‘Coalition of the Willing’ জোটের বৈঠকের পর, যেখানে শান্তি উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের নেতারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আমন্ত্রণে কিয়েভ সফর করেন। অন্যদিকে, ইতালি, কানাডা, ইউরোপীয় কমিশন ও ন্যাটোর নেতারা ভিডিওর মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন জানান, জোটটি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি’কে সমর্থন করে। তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রস্তুত আছে।’’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক এবং নতুন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্জ কিয়েভে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। তাদের এই সফরকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মস্কোয় দেখা করা ২০ জনের বেশি নেতার প্রতি প্রতীকী জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘‘আমরা রাশিয়ার বর্বর ও অবৈধ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানাতে কিয়েভে একত্রিত হয়েছি।’’
তারা আরও বলেন, ‘‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়াকে পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানাই, যা একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি আলোচনা শুরু করার পথ তৈরি করবে।’’
এদিকে, রাশিয়া তাদের বিজয় দিবস উপলক্ষে ঘোষণা দেওয়া ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শনিবার শেষ করছে। যদিও সংঘর্ষ কমে এসেছে, উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
‘Coalition of the Willing’ জোট বলেছে, চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে প্রয়োজন হলে ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের কথাও বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।
এর আগে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘‘যদি যুদ্ধবিরতি মানা না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।’’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘‘আমরা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে অভ্যস্ত এবং এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার উপায় আমাদের জানা আছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের ভয় দেখানোর কোনো মানে নেই।’’
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ‘‘এই তথাকথিত শান্তি পরিকল্পনাগুলোকে ছুড়ে ফেলে দিন।’’
এদিকে ইউক্রেনজুড়ে রুশ হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সুমি অঞ্চলে রুশ গোলার আঘাতে ৮৫ বছর বয়সী এক নারী নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। ১৯টি আবাসিক ভবন ও ১০টি বাণিজ্যিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের পুলিশ।
পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের কোস্টিয়ান্তিনিভকায় রুশ গোলায় একজন আহত হন এবং দুটি অ্যাপার্টমেন্টে আগুন ধরে যায়।
খেরসন শহরে রুশ ড্রোন হামলায় ৫৮ বছর বয়সী এক বাসিন্দা আহত হন, চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে আঞ্চলিক প্রশাসন জানিয়েছে।
সূত্রঃ বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আশিক