ভারতের হরিয়ানার জনপ্রিয় ভ্রমণ ভ্লগার এবং ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সিভিল লাইন্স থানার পুলিশ।
'ট্রাভেল উইথ জেও' নামক একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের সঞ্চালক জ্যোতিকে নিউ আগারসাইন এক্সটেনশন এলাকা থেকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও ভারতীয় ন্যায় সংহিতার প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, জ্যোতি মালহোত্রা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং বিভিন্ন স্পর্শকাতর তথ্য তাদের কাছে পাচার করতেন। এই কার্যকলাপ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সুস্পষ্ট হুমকি বলে মনে করছে পুলিশ।
তদন্তে জানা গেছে, জ্যোতি মালহোত্রার ইউটিউব চ্যানেলে পাকিস্তান ভ্রমণের একাধিক ভিডিও রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'ইন্ডিয়ান গার্ল ইন পাকিস্তান', 'ইন্ডিয়ান গার্ল এক্সপ্লোরিং লাহোর', 'ইন্ডিয়ান গার্ল অ্যাট কাতাস রাজ টেম্পল' এবং 'ইন্ডিয়ান গার্ল রাইডস লাক্সারি বাস ইন পাকিস্তান'। এই ভিডিওগুলি তার ঘন ঘন পাকিস্তান সফরের প্রমাণ বহন করে।
পুলিশ সূত্রে খবর, জ্যোতি মালহোত্রা হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো এনক্রিপ্টেড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি সন্দেহ এড়াতে তিনি শাহবাজ নামক এক পাকিস্তানি হ্যান্ডলারের মোবাইল নম্বর 'জাট রান্ধাওয়া' ছদ্মনামে সেভ করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় জ্যোতি মালহোত্রার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার ইউটিউব চ্যানেলে ৩.৭৭ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ১.৩৩ লক্ষ ফলোয়ার বিদ্যমান। তিনি তার ইউটিউব প্রোফাইলে নিজেকে 'নোমাডিক লিও গার্ল', 'ওয়ান্ডারার হরিয়ানভি + পাঞ্জাবি' এবং 'পুরানে খয়ালোঁ কি মডার্ন লড়কি' হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
পুলিশের দায়ের করা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) উল্লেখ করা হয়েছে, জ্যোতি মালহোত্রার 'ট্রাভেল উইথ জেও' নামক ইউটিউব চ্যানেলটির মাধ্যমে তিনি নিয়মিতভাবে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতেন। তদন্তকারীদের অভিযোগ, পাকিস্তানি হ্যান্ডলাররা তাকে সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্টের মাধ্যমে পাকিস্তানের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার দায়িত্ব দিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মালহোত্রা দাবি করেছেন যে তিনি ২০২৩ সালে একটি প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে পাকিস্তান সফর করেছিলেন।
এফআইআর অনুযায়ী, ওই পাকিস্তান সফরের সময় জ্যোতি মালহোত্রা আহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশ নামক এক ব্যক্তির সাথে পরিচিত হন এবং ভারতে ফিরে আসার পরেও হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখেন। পরবর্তীতে, আহসানের পরামর্শে তিনি দ্বিতীয়বার পাকিস্তান সফরে যান। সেখানে আলি আহসান নামক এক ব্যক্তি তাকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার কয়েকজন সদস্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
পুলিশের অনুমান, এই সাক্ষাতের পরই জ্যোতি মালহোত্রা সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানি এজেন্টদের কাছে পাচার করা শুরু করেন। মালহোত্রা নাকি জেরায় স্বীকার করেছেন যে তিনি তার পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের ফোন নম্বর ছদ্মনামে সংরক্ষণ করতেন যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের (পিআইও) সাথে তার গোপন যোগাযোগের এটি একটি সুপরিকল্পিত কৌশল ছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল