বিশ্বের মেধাবী পেশাদারদের যুক্তরাজ্যে টানতে ভিসা ফি কমানো বা মওকুফের পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। যুক্তরাষ্ট্র যখন ভিসা ফি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, তখন ব্রিটেনের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের উদ্যোগে ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট টাস্ক ফোর্স’ এই সংস্কার নিয়ে কাজ করছে। এর লক্ষ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং ডিজিটাল বিশেষজ্ঞদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট ও ট্রেজারির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আলোচনায় থাকা প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে শীর্ষস্থানীয় পেশাদারদের জন্য ভিসা ফি একেবারে শূন্য করে দেওয়া। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা এমন লোকদের কথা বলছি, যারা বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন বা মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন। তাঁদের জন্য খরচ শূন্য করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।”
এই আলোচনা শুরু হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এইচ-১বি ভিসার আবেদন ফি ১ লাখ মার্কিন ডলার করার ঘোষণা আসার আগেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পর ব্রিটেনের ভিসা ফি সংস্কার উদ্যোগ আরও গতি পেয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, নভেম্বরে আসন্ন বাজেটের আগে এটি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে।
টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্টারমারের ব্যবসায়িক উপদেষ্টা বরুণ চন্দ্র ও বিজ্ঞানমন্ত্রী লর্ড প্যাট্রিক ভ্যালেন্স। যদিও হোম অফিস—যাদের প্রধান দায়িত্ব অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ—এখনও সরাসরি আলোচনায় বসেনি। তবে অভিবাসন ভিসার নিয়মিত পর্যালোচনা প্রক্রিয়া চালু আছে।
একজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা বর্তমান ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা’কে “আমলাতান্ত্রিক দুঃস্বপ্ন” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা প্রক্রিয়াকে সহজ করার দিকেও নজর দিচ্ছেন।
সরকারি এক কর্মকর্তা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানান, এই পদক্ষেপ অভিবাসন কমানোর নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। বরং লক্ষ্য হলো বিশ্বের “সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সেরা মেধাবীদের” যুক্তরাজ্যে টানা। একই সময়ে চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসও বৈশ্বিক প্রতিভা আকর্ষণে ট্যাক্স ব্যবস্থার সংস্কার করছেন।
২০২০ সালে চালু হওয়া ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা’-র আবেদন ফি বর্তমানে ৭৬৬ পাউন্ড, সঙ্গী ও সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই। এর সঙ্গে বার্ষিক স্বাস্থ্য সারচার্জ বাবদ মাথাপিছু ১ হাজার ৩৫ পাউন্ড দিতে হয়। ভিসাটি চাকরিদাতার ওপর নির্ভরশীল নয় এবং যুক্তরাজ্যে দ্রুত স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেয়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এই ভিসার আবেদন ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৯০৩-এ দাঁড়িয়েছে।
তবে কঠোর দক্ষতা ও বেতন শর্ত এবং ফি বৃদ্ধির কারণে দক্ষ কর্মী ভিসার আবেদন কমেছে। ইউনিভার্সিটিজ ইউকে ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক জেমি অ্যারোস্মিথ বলেন, মার্কিন বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করতে এখন পর্যন্ত সরকারের প্রধান পদক্ষেপ হলো ১২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের গ্লোবাল ট্যালেন্ট ফান্ড। তাঁর মতে, গবেষকদের অভিবাসন খরচ বিশ্বমানের প্রতিযোগিতামূলক রাখতে হবে।
তিনি বলেন, “সারা বিশ্ব থেকে প্রতিভা আনতে আমাদের তহবিল, স্বায়ত্তশাসন এবং সহজ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক