শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ইরানকে কোন দিকে নেবেন রাইসি

ইরানকে কোন দিকে নেবেন রাইসি

ইবরাহিম রাইসি

ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ইবরাহিম রাইসি। স্থানীয় সময় গতকাল বিকালে তিনি শপথ নেন। এমন এক সময়ে তিনি দেশটির ক্ষমতায় বসছেন যখন বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে ইরান। দেশটির রাজনীতিতে তার পরিচয় একজন কট্টরপন্থি নেতা হিসেবে। বিচারপতি থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি। বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে, রাইসি ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান এবং তার মতাদর্শ অতি রক্ষণশীল। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং অতীতে রাজনৈতিক বন্দীদের মৃত্যুদন্ডের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল। 

৬০ বছর বয়সী রাইসি তার কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছেন। তাকে ২০১৯ সালে প্রধান বিচারকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর দুই বছর আগে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি হাসান রুহানির কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে এবার তিনি জিতেছেন।

এখন আলোচনার বিষয় হচ্ছে তিনি ঘরে-বাইরে তার নীতি কেমনে সাজাবেন। হবে সেটি বিশ্লেষণের জন্য বিচারক হিসেবে তার ভূমিকা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। ১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের সময় থেকেই দেশটির বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত তিনি। সে সময়ে বিপুল রাজনৈতিক বন্দী ও ১৯৮০-এর দশকে বামপন্থিদের মৃত্যুদন্ডে তিনি সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন। পরবর্তীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারী, মানবাধিকার বা পরিবেশকর্মীদেরও কারাগারে পাঠানোতে তার প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে। এসব ভূমিকার কারণে ২০১৯ সালেই যুক্তরাষ্ট্র রাইসিকে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

তাকে নিয়ে জার্মানির গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে তেহরানভিত্তিক মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদির সঙ্গে কথা বলেছেন। নার্গিস বলেন, ‘ভোটারদের বড় একটি অংশ রাইসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাননি। গত চার দশক ধরে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে তার ভূমিকার কথা তাদের ভালোই জানা রয়েছে।’ নার্গিসের মতে, রাইসি ও তার সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হতে যাচ্ছে ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি।

অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ : যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরোপের পর থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইরান। তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অর্থনীতি ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। মহামারী সেই পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। দেশটির বাজেট ঘাটতি ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বার্ষিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫০ ভাগ, ৭০ ভাগ বেড়েছে খাবারের দাম। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে ২০১৯ সালে দেশটির মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহিংস পদ্ধতিতে সেই আন্দোলন দমন করে। আগামী বছরগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জনঅসন্তোষ আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। এমন পরিস্থিতি নতুন সরকার কীভাবে সামলাবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনেকের কাছে।

নার্গিস মোহাম্মদি বলেন, ‘আমি মনে করি না রাইসি আমাদের নাগরিক অধিকার মেনে নেবেন কিংবা সংবিধানে দেওয়া শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা এনজিও   গঠনের অধিকার দেবেন। তার আশপাশে যারা আছেন তারা মানবাধিকার বা নাগরিক সমাজের সঙ্গে   সংলাপের বিষয়টিই বোঝেন না।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা না বিরোধ : রাইসি নির্বাচনী প্রচারে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টিকে সামনে রাখেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ তুলতে উদ্যোগী হতে হবে রাইসিকে, এমনটাই মনে করেন ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ  সিনা আজাদি। তার মতে, রাইসি সরকারকে একই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুই দিকেরই বড়  ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কতটা উদ্যোগী হবেন রাইসি? সেটি নির্ভর করছে ইরানের পরমাণু চুক্তিতে ফেরার সম্ভাবনার ওপর। ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়, অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে ইরানের ওপর। পরবর্তীতে ইরানও নিজেদের চুক্তি থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এই বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিও ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফেরার বিষয়ে ইরানের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। তবে সরকারের পটপরিবর্তনে সেটি কতটা এগোবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির অধীনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটানো এবং জাতিসংঘে দায়িত্ব পালন করা জারিফই ইরানের পক্ষে পরমাণু আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন। সিনা আজাদি বলেন, ‘তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সম্পর্কে ভালো জানেন। জারিফের মতো একজন পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ রাইসির সঙ্গে নেই। এটি একটি বড় সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি।’

পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস- রাইসি সরকারের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন উপ-প্রধান বিচারক আকি বাঘেরি কানি। তিনি বরং ইরানের পরমাণু চুক্তির কড়া সমালোচক হিসেবেই পরিচিত। যে কারণে কূটনৈতিক সংকটগুলো মোকাবিলায় সামনে খুব একটা ইতিবাচক ফলাফলের আশা করছেন না বিশেষজ্ঞরা। ডয়েচে ভেলে

সর্বশেষ খবর