বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

যেভাবে এই দুর্দশা শ্রীলঙ্কার

শ্রীলঙ্কার পরাক্রমশালী পরিবার রাজাপক্ষে পবিরার। সেই পরিবারের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করে ছাড়ল। দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের জন্য এই পরিবারকেই দায়ী করছে বিক্ষোভকারীরা। তবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া কিন্তু গোপনে ক্ষমতা ছাড়ার আগেই দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। গতকাল দিনের আলো ফোটার আগেই রাজাপক্ষে সামরিক বিমানে চড়ে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান। এর আগে শনিবার বিক্ষোভকারীরা কলম্বোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দখল নিলে এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিলে পার্লামেন্টের স্পিকার প্রেসিডেন্ট গোতাবা বুধবারই (গতকাল) পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন।

যেভাবে পতন শ্রীলঙ্কার : বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় আয়ের তুলনায় বেশি ব্যয়, রপ্তানিযোগ্য পণ্য ও সেবার উৎপাদন পর্যাপ্ত মাত্রায় উন্নীত না করাসহ টানা কয়েকটি সরকারের নানান অব্যবস্থাপনাই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাজাপক্ষে সরকার ব্যাপক হারে কর কমালে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে চলে যায়। তার কয়েক মাস পরই আঘাত হানে কভিড-১৯ মহামারি। এসবের কারণে শ্রীলঙ্কার রাজস্ব আয়ের বেশিরভাগ উৎসই নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে। লাভজনক পর্যটন শিল্পে ধস নামে, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোও হ্রাস পায়। বৈদেশিক মুদ্রার জটিল বিনিময় পদ্ধতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। দেশটির সরকারের আয় কমে যাওয়া এবং বিদেশি ঋণের বড় বড় কিস্তি পরিশোধে সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থেকে রেটিং সংস্থাগুলো ২০২০ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার ক্রেডিট রেটিং নামাতে থাকে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকারও কলম্বোর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারকে তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যে কারণে মাত্র দুই বছরে তাদের রিজার্ভের ৭০ শতাংশের বেশি খরচও হয়ে যায়। এর পরেই শুরু অর্থনৈতিক দৈন্যদশার।

বিদেশি মুদ্রার এই সংকটই এক সময় উন্নয়নশীল অর্থনীতির মডেল হিসেবে পরিচিত দেশটির অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়। তীব্র জ্বালানি ঘাটতিতে ফিলিং স্টেশনগুলোতে গাড়ির লাইন দীর্ঘ হতে শুরু হয়। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ক্রমাগত বাড়তে থাকে, হাসপাতালে ওষুধ ফুরিয়ে যায়। খাদ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে মানুষ সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামে।

সর্বশেষ খবর