শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

নতুন সরকার এলেই কি ভাগ্য বদলাবে শ্রীলঙ্কার?

নতুন সরকার এলেই কি ভাগ্য বদলাবে শ্রীলঙ্কার?

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহে

সংকট জেঁকে বসেছে শ্রীলঙ্কায়। অর্থনীতির সব সূচক মাত্রাহীন হয়ে পড়েছে। আমদানি করার মতো অর্থই নেই দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তার মধ্যেই মানুষ এসবের জন্য দায়ী সরকারকে উৎখাত করে ছেড়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট পালিয়ে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ছয়বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট আসার কথা দেশটিতে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে নতুন সরকার এলেই কি অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে। এ অবস্থায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহে সতর্ক করে বলেছেন, শিগগিরই স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে শ্রীলঙ্কা স্থবির হয়ে পড়তে পারে।

বিবিসির নিউজ নাইট প্রোগ্রামে বীরাসিংহে বলেন, প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়াম আমদানির জন্য পর্যাপ্ত বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে ‘প্রচুর অনিশ্চয়তা’ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বেইলআউট প্যাকেজ পাওয়ার অগ্রগতি একটি স্থিতিশীল প্রশাসনের ওপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দেশটির অর্থনীতি ধসে পড়েছে আর খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য অনেকেই রাজাপক্ষে প্রশাসনকে দোষ দিচ্ছে আর মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া বিক্রমাসিংহেকে এই সমস্যার একটি অংশ বলে বিবেচনা করছে।

এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়া নন্দলাল বীরাসিংহে বলেন, স্থিতিশীল প্রশাসন ছাড়া কীভাবে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা যাবে ‘সামনে তার কোনো পথ’ দেখছেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভবত চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত ডিজেলের অন্তত তিনটি চালান এবং পেট্রোলের একটি বা দুটি চালানের জন্য অর্থায়ন করতে পেরেছি, কিন্তু এর বাইরে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় পেট্রোলের জন্য পর্যাপ্ত বিদেশি মুদ্রা সরবরাহ করতে পারব কি না তা নিয়ে প্রচুর অনিশ্চয়তা রয়েছে। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘যদি তা না করা যায় তাহলে গোটা দেশের (কার্যক্রম) বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো একজন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা মন্ত্রিসভা থাকা দরকার। অন্যথায় সবাইকেই ভুগতে হবে।’ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি বেইলআউট ফান্ডের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বীরাসিংহে। ঋণ কাঠামোর জন্য ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনায় ভালো অগ্রগতি করতে পারবেন এমন আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে কত দ্রুত একটি স্থিতিশীল প্রশাসন গঠিত হয় তার ওপর।’

স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এ সংকট থেকে বের হতে শ্রীলঙ্কার ‘তিন চার বা পাঁচ মাস’ লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে সম্ভাব্য ‘নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে’ দেখা হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘রাজনৈতিক পদ গ্রহণে’ তার কোনো আগ্রহ নেই বলে জানান বীরাসিংহে।

বিলুপ্ত হচ্ছে প্রেসিডেন্টের পতাকা : শ্রীলঙ্কায় বিলুপ্ত হচ্ছে প্রেসিডেন্টের পতাকা, বাদ যাচ্ছে ‘হিজ এক্সেলেন্সি’ শ্রীলঙ্কার অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল দুপুরে প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়ার কাছে শপথ নিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। শপথ নেওয়ার পর প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তার সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, এখন থেকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে সম্বোধনে ‘হিজ এক্সেলেন্সি’ বা ‘মহামান্য’ ব্যবহার বাতিল হচ্ছে। বিলুপ্ত হচ্ছে প্রেসিডেন্টের পতাকাও। এ খবর প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউজ ফার্স্ট। খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের ভাষণকালীন তাকে ‘হিজ এক্সেলেন্সি’ শব্দটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রনিল। রাষ্ট্রপতির পতাকা বিলুপ্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশকে একটিমাত্র পতাকার ছায়াতলে রাখতে হবে এবং সেটি শুধু জাতীয় পতাকা। দেশের আইনশৃঙ্খলা, গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় নিজের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। টেলিভিশনের দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি কখনই কোনো অসাংবিধানিক কাজে সহায়তা করব না। কারণ, আইনশৃঙ্খলার পতন দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সর্বশেষ খবর