ইউক্রেনজুড়ে আবারও ব্যাপক মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে দেশটির বিভিন্ন অংশে বাড়িঘর ও জ্বালানি অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার বর্ষপূর্তির দুই সপ্তাহ পরে এ হামলা চালানো হলো। আর তিন সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনে এটিই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হামলা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক টেলিগ্রামবার্তায় জানিয়েছেন, ১০টি অঞ্চলের অবকাঠামো ও আবাসিক ভবনে হামলা হয়েছে।
৯ জন নিহতের কথা নিশ্চিত করে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, এদের মধ্যে কিয়েভে দুজন, খেরসনে তিনজন এবং দিনিপ্রোতে একজন নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুজনি বলেছেন, মোট ৮১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে আটটি শাহেদ ড্রোন হামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ও চারটি ড্রোন ভূপাতিত করতে পেরেছে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সর্বশেষ এ হামলাকে মস্কোর ‘কদর্য কৌশল’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলছেন, ‘এ হামলার পেছনে কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই। এটা রাশিয়ার বর্বরতা।’ জাপোরিশা পরমাণু কেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই : এ হামলার ফলে ইউরোপের সর্ববৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিশায় বিদ্যুৎ নেই। বিভিন্ন শহরেও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
গ্রাসি আরও বলেন, ‘এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো, আমি আবারও বলছি ষষ্ঠবার এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি- ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘আমরা কী করছি? আমরা কীভাবে এখানে বসে আছি এবং ঘটনা ঘটতে দিচ্ছি? এভাবে তো চলতে পারে না।’ কর্মকর্তারা বলছেন, জাপোরিশা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন ডিজেল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ কেন্দ্রে যে পরিমাণ ডিজেল মজুদ আছে তা দিয়ে আরও ১০ দিন চলতে পারে।
ইউক্রেনের জাপোরিশা অঞ্চলের কিছু অংশ এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে। এ অঞ্চলে রাশিয়ার নিযুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন সেখানে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরে বিদ্যুৎ সংকট : রাজধানী কিয়েভ, উত্তরের খারকিভ এবং দক্ষিণের ওডেসার মতো বড় বড় শহরেরও অনেক জায়গায় এখন বিদ্যুৎ নেই। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো বলছেন, তার শহরের ৪০ শতাংশ বাসিন্দাদের বাড়িতে এখন হিটিং নেই। ইউক্রেনের খারকিভ শহরের উত্তরাঞ্চল থেকে ওডেসার দক্ষিণে এবং পশ্চিমে জাইটোমি পর্যন্ত এ হামলা চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, রাশিয়ার হামলায় খারকিভ ও ওডেসায় আবাসিক ভবন ও অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছে। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এদিকে ওয়াগনার গ্রুপ পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহরের পূর্বাঞ্চল দখলে নেওয়ার দাবি করেছে। অন্তত নয়জন নিহত : বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে বলা হচ্ছে- এসব হামলায় কমপক্ষে নয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় লাভিভে মিসাইলের আঘাতে বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, সেখানে আরও অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষ বলছে খেরসন ও দিনিপ্রপেত্রোভস্ক শহরেও রাশিয়ার গোলাবর্ষণে আরও তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।
