মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পশ্চিম আফ্রিকায় একের পর এক অভ্যুত্থান

পশ্চিম আফ্রিকায় একের পর এক অভ্যুত্থান

বুরকিনা ফাসো, গিনি, মালি, চাদের পর সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকার আরেকটি দেশ নাইজারেও সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে। প্রতিটি দেশই ফ্রান্সের সাবেক উপনিবেশ। লক্ষণীয় হলো, ১৯৯০ সাল থেকে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোতে মোট ২৭ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে, তার ৭৮ শতাংশই হয়েছে সাবেক ফরাসি উপনিবেশগুলোতে। এ কারণে অনেক বিশ্লেষকই প্রশ্ন তোলেন, পশ্চিম আফ্রিকার এই অস্থিরতার পেছনে মূল দায় কি ফ্রান্সের? অথবা এই অঞ্চলটি কি এখনো ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের পরিণতি বহন করে চলেছে? অভ্যুত্থানকারী নেতারা অবশ্য এমন সন্দেহকে বাহবাই দেবেন। মালির সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা কর্নেল আবুলায়ে মাইগা গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেন। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, ‘নব্য-ঔপনিবেশিক, আধিপত্যবাদী’ দেশটি ‘সার্বজনীন নৈতিক মূল্যবোধ বর্জন করেছে’ এবং মালির ‘পিঠে ছুরি মেরেছে’। বুরকিনা ফাসোতেও ফ্রান্সবিরোধী মনোভাব এখন তুঙ্গে। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সামরিক সরকার ফরাসি সৈন্য মোতায়েন সম্পর্কিত দীর্ঘদিনের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে এক মাসের মধ্যে সব ফরাসি সৈন্যকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। মালি ও বুরকিনা ফাসোর প্রতিবেশী নাইজারের সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজউমকে উৎখাতের পর যুক্তি দেয়, তিনি ছিলেন ফ্রান্সের বসানো পুতুল, যার মূল লক্ষ্যই ছিল ফরাসি স্বার্থ রক্ষা করা। শুধু তা-ই নয়, নাইজারের সেনাশাসক জেনারেল আবদুরহমান চিয়ানি ফ্রান্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পাঁচটি সামরিক চুক্তি বাতিল করে দিয়েছেন। তবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এসব রোষের পেছনে ঐতিহাসিক কিছু কারণও রয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনামলে ফরাসিরা এসব দেশে এমন রাজনৈতিক পদ্ধতি চালু রেখেছিল, যার প্রধান লক্ষ্যই ছিল সম্পদ কুক্ষিগত করা।

আর এই ব্যবস্থা বজায় রাখতে ফরাসিরা নির্যাতনমূলক বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করেছে। ব্রিটেনও তাদের উপনিবেশগুলোতে একই কাজ করেছে। তবে ফরাসিরা কাগজে-কলমে ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হওয়ার পরেও তাদের সাবেক উপনিবেশগুলোতে শক্ত অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। সেই চেষ্টা এতটাই জোরালো যে, অনেক সমালোচক বলেন, ফ্রান্স এখনো তাদের সাবেক উপনিবেশগুলোর রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সরাসরি নাক গলাচ্ছে।

পশ্চিম আফ্রিকার নয়টি ফরাসি ভাষাভাষী দেশের সাতটিতেই এখনো সিএফএ ফ্রাঁ মুদ্রা চালু রয়েছে। এসব মুদ্রার বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হয় ইউরোর মূল্যমানের ভিত্তিতে। আফ্রিকান এসব মুদ্রার বিনিময় মূল্যের স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দেয় ফ্রান্স।

সাবেক এসব উপনিবেশগুলোর অধিকাংশের সঙ্গেই ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় প্রায় দেখা যায় বিভিন্ন দেশে ফ্রান্সপন্থি অজনপ্রিয় রাজনীতিকদের ক্ষমতায় রাখতে ফরাসি সৈন্য মোতায়েন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে কট্টরপন্থিদের বিদ্রোহ দমনে ফ্রান্সের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো প্রচুর অর্থ সাহায্য দিয়েছে, সেনা মোতায়েন করেছে। কিন্তু সরকারগুলো কোনোমতেই বিশাল এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারছে না। ফলে, মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে সরকারগুলো চাপে পড়েছে। এ দেশ দুটোতে এমন মনোভাব বাড়ছে যে, ফরাসিদের সাহায্যে তাদের ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি হচ্ছে। আর জনমনে এই ক্ষোভের কারণে সামরিক নেতারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সাহস পাচ্ছেন। তারা ভাবছেন, জনগণ তাদের সমর্থন করবে। ফ্রান্সই যে একমাত্র ঔপনিবেশিক শক্তি যারা সাবেক উপনিবেশগুলোতে স্বৈরাচারী নেতাদের মদদ দিয়েছে, তা কিন্তু নয়। বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ খবর