রুশ অধিকৃত বাখমুতের কাছে চলা লড়াইয়ে বড়সড় জয় পাওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেনের সেনারা। গত দেড় বছর ধরে চলছে দুই দেশের রক্তক্ষয়ী সংঘাত। রণক্ষেত্রের ছবি পাল্টে ‘কাউন্টার অফেন্সিভ’ কৌশলে আক্রমণ শানাচ্ছে জেলেনস্কি বাহিনী। রুশ বাহিনীকে বোকা বানিয়ে বাখমুত শহরের দক্ষিণ ও পূর্বের কিছু অঞ্চল ইতোমধ্যে দখল করেছে ইউক্রেনের ফৌজ। রবিবার এ বিষয়ে মুখ খোলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘আমি সেনার সাহসী জওয়ানদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। বাখমুতসহ ধীরে ধীরে তারা ইউক্রেনের হারানো জমি উদ্ধার করছে।’ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ও রাশিয়ার ভূখণ্ডে রবিবার একাধিক ড্রোন হামলা ঘটেছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের আদালতে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত চলছে। জেলেনস্কি তার দৈনিক ভিডিও বার্তায় বলেন, বাখমুত শহরের দক্ষিণে ক্লিশচিভকা গ্রাম ইউক্রেনের সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তার মতে, ধাপে ধাপে গোটা বাখমুত শহরও আবার শত্রুমুক্ত করা হবে। ইউক্রেনের স্থলবাহিনীর প্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি সেই গ্রামে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। নিরপেক্ষভাবে সেই দাবি যাচাই করা এখনো সম্ভব হয়নি। মস্কোও বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযানে ইউক্রেন এখনো তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য না পেলেও বাখমুত শহরের কাছে কিছু এলাকা পুনর্দখলের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণে রুশ হানাদার বাহিনীকে তাড়ানোর কাজ সহজ হবে বলে অনেক সামরিক বিশ্লেষক মনে করছেন।
ইলিয়া ইভলাশ নামের এক সামরিক মুখপাত্র বলেন, এই সংঘাত রুশ বাহিনীর এয়ারবোর্ন ইউনিট এবং চেচেন নেতা রমজান কাদিরভের ‘ধাখমাত’ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে রুশ অপরাধীদের ইউনিট ‘স্টর্ম জেড’, সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ও মোটোরাইজড রাইফেল ইউনিটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রবিবারই ক্রিমিয়া উপদ্বীপে কমপক্ষে নয়টি ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর উপকণ্ঠে ও দুটি সীমান্ত এলাকায়ও এমন হামলা ঘটেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রাম চ্যানেলে অবশ্য সব ড্রোন হামলা বানচাল করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। মোট ১৩টি হামলার উল্লেখ করেছে রাশিয়া। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের উল্লেখ করেনি মস্কো। শুধু ইউক্রেনের পূর্বে খারকিভ শহরে এক সামরিক যান মেরামতের কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতির কথা স্বীকার করা হয়েছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাত শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই। জাতিসংঘের মানবাধিকার আদালতেও গতকাল থেকে দুই দেশ নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরছে। গত বছর ইউক্রেনের ওপর হামলার অজুহাত হিসেবে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে গণহত্যার দাবি তুলেছিল। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালতের রাশিয়ার চলমান সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার আছে কি না, সে দিকে সবার নজর থাকবে।