ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ায় নানান দিক থেকে ‘বয়কট’র মুখে পড়তে শুরু করেছে তুরস্ক। সবশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের নয়টি বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করা তুরস্কের একটি কোম্পানির নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার বদলায় চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’র সময় তুরস্ক পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার পর এ ব্যবস্থা নিল ভারত।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ সেলেবি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামের কোম্পানিটির নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ আদেশ তাৎক্ষিণকভাবে কার্যকর হবে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়। ভারতের নয়টি বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সিংহভাগ কাজই করে সেলেবি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। দিল্লি বিমানবন্দরেও তুরস্কভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের যোগ রয়েছে। সেলেবি এভিয়েশনের সেলেবি দিল্লি কারগো টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট ইন্ডিয়া নামের কোম্পানি দিল্লি বিামনবন্দরে কর্গো সেবা দিয়ে আসছে। তুর্কি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এটি প্রথম পদক্ষেপ হলেও গ্রিস, আর্মেনিয়া, সাইপ্রাস এবং মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো তুরস্কবিরোধী দেশগুলোর সঙ্গে কয়েক বছর ধরেই সম্পর্ক জোরালো করে তুলেছে ভারত।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুরলিধর মহল বলেন, ‘তুরস্কভিত্তিক সেলেবি এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড দেশের কয়েকটি বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে। তুরস্ক খোলাখুলিভাবেই পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছে।-এনডিটিভি
বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই সেলেবিকে নিষিদ্ধ (ছাড়পত্র প্রত্যাহার) করা হয়েছে।’ তবে ভারতের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় সেলেবি এভিয়েশন বলেছে, ভারতে স্থানীয় উদ্যোগেই সেলেবির কার্যক্রম পচিালিত হয়ে আসছে। এক বিবৃতিতে কোম্পানি বলেছে, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে তারা ৬৫ বছর ধরে বিমান পরিষেবা দিয়ে আসছে, যা তিনটি মহাদেশ এবং ছয়টি দেশে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং কার্গো অপারেশন পরিচালনা করছে।
তুরস্কের পাকিস্তানে যোগ
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর সেই হামলার জবাবে ৭ মে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ভারত। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। ওই অভিযান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে, পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হয়।
এই সংঘাতের শুরু থেকেই পাকিস্তানের প্রতি মৌখিক সমর্থন জানিয়ে আসছিল তুরস্ক। পরে ভারতের অভিযানের জবাবে পাল্টা হামলায় পাকিস্তান তুরস্কে নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পাশাপাশি ড্রোনও ব্যবহার করে বলে খবর পাওয়া যায়।
বয়কটের মুখে তুরস্ক
অপারেশন সিঁদুর ঘিরে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ায় নানা দিক থেকে ভারতের বয়কটের মুখে পড়েছে তুরস্ক। সামাজিক মাধ্যমে ‘বয়কট তুরস্ক’ ডাক দিয়ে দেশটিতে ভ্রমণ বাতিল করছেন ভারতীয় পর্যটকরা, পাশাপাশি তুরস্কের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।