গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলায় গতকালও অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল আলজাজিরা জানিয়েছে, একই পরিবারের ১৪ জন একসঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন গাজা নগরীর নিকটবর্তী আত-তওয়াম এলাকায়। এতে পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। গাজা নগরী ও আশপাশের হাসপাতালে হতাহতদের ভিড়ে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। চিকিৎসাসামগ্রী ও জ্বালানি ঘাটতির কারণে চিকিৎসকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া ক্রমবর্ধমান আহতদের চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৪ হাজার ৬৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার এ হত্যাযজ্ঞে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে দখলকৃত পশ্চিম তীরে নতুন বসতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়েছেন, যা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে কার্যত অসম্ভব করে তুলবে। বৃহস্পতিবার পূর্ব জেরুজালেম- সংলগ্ন ইসরায়েলি বসতি মাআলে আদুমিমে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রকল্পের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
পরিকল্পনাটি পশ্চিম তীরকে প্রায় দুই ভাগে বিভক্ত করবে। নেতানিয়াহু অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা আমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করতে যাচ্ছি; কোনো দিনও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না। এ ভূমি আমাদের। আমরা এ শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করব। -আল জাজিরা
বর্তমানে ফিলিস্তিনের গাজা শহর পুরোটাই গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরকেও পুরোপুরি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার কাজও চলমান। এ কর্মকাণ্ড শেষ হলে ফিলিস্তিনের ভূমিতে নিজেদের শহর গড়ে তুলবে ইসরায়েল এবং এটি নিয়ে একটি বৃহৎ প্রকল্প পরিকল্পনা করেছে দখলদাররা। প্রকল্পটির নাম ‘ইস্ট ১’ বা ‘ই-ওয়ান’। এটি ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় গড়ে তোলা হবে এবং অন্তত ৩ হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ সম্প্রসারণের ফলে পশ্চিম তীরের বড় অংশ দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং আশপাশের হাজারো ইসরায়েলি বসতির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাবে। পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যময়। তারা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে এ শহরকেই চায়। আন্তর্জাতিক আইনে ১৯৬৭ সাল থেকে দখলকৃত পশ্চিম তীরে সব ইসরায়েলি বসতিই অবৈধ হিসেবে গণ্য, তা ইসরায়েলি সরকারের অনুমোদন থাক বা না থাক।