১৯ জুন, ২০২১ ০৯:৪২

প্রাণিকুলের রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ

মুফতি রুহুল আমীন কাসেমী

প্রাণিকুলের রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ

আমাদের প্রতিপালক, মহান রাব্বুল আলামিনের একটি বিশেষ গুণবাচক নাম ‘রাজ্জাক’-যার অর্থ রিজিকদাতা। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিজিকদাতা হিসেবে কোরআনুল কারিমে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। প্রাণিকুলের রিজিকের নিয়ন্ত্রণ একমাত্র তাঁর কাছেই রয়েছে। একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাতেই রিজিক বাড়ে ও কমে। মানুষ শুধু রিজিক তালাশের চেষ্টা করে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারে। একটু সচ্ছলতা ও আরাম আয়েশের জন্য, এর বাইরে কিছুই করতে পারে না, পারবেও না। রিজিক তালাশের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে দেন। এখানে কারও কোনো হাত নেই। কেউ কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আল্লাহ ইরশাদ করেন, আল্লাহপাক যাকে চান তাকে অপরিমিত জীবিকা দান করেন, (সুরা বাকারা-২১২)। বৈধ পন্থায় ধন সম্পদ উপার্জনে কোনো বাধা নেই, বরং তিনি তাতে বান্দাকে উৎসাহিত করেছেন। এ ছাড়া ধন সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হয়। তিনি বলেন, আল্লাহপাক তোমাদের যে বৈধ ও পবিত্র রিজিক দান করেছেন, তোমরা তা খাও, (সুরা মাইদা ৮৮)। রিজিক তালাশের আগে রিজিকের পবিত্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। অর্থাৎ হালাল, হারাম জেনে উপার্জন করা ও খাওয়া। শরিয়তবিরোধী সুদ, ঘুষ ও অবৈধ পন্থায় হারাম, জুলুম ও জোরপূর্বক কলাকৌশলের মাধ্যমে অন্যের সম্পদ হরণ করে রিজিক তালাশ করা একজন মুসলিমের জন্য সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়। এতে দুনিয়া ও আখেরাতের সব সফলতা থেকে বঞ্চিত হবে। বরং আল্লাহর কাছে পবিত্র রিজিকের জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করতে থাকা ও অসচ্ছলতায় ধৈর্য ধারণ করা। কেননা আল্লাহ সর্বজীবের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। তিনি নিজেই রিজিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আর মানুষ হলো আল্লাহপাকের সৃষ্টির সেরা জীব। তিনি বলেন : জমিনের ওপর বিচরণশীল সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর, (সুরা হুদ-৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন : আল্লাহ কারও জীবনোপকরণের প্রশস্ততা দেন ও কারও জীবিকা সংকীর্ণ করে দেন, (সুরা রাআদ-২৬)। রিজিক পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলে, আল্লাহ নেয়ামতের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেন। তিনি বলেন : যদি তোমরা আমার অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় কর, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য অনুগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অস্বীকার কর, তাহলে জেনে রাখ আমার শাস্তি বড়ই কঠিন, (সুরা ইব্রাহিম-৭)। রিজিক সংকীর্ণ হয়ে অসচ্ছলতায় বিধ্বস্ত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলে, আল্লাহর রহমত থেকে নৈরাশ না হওয়া। বরং আল্লাহর কাছে হালাল রিজিকের জন্য, পারিবারিক সচ্ছলতার জন্য দোয়া করতে থাকা। পূর্ণাঙ্গ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে সাহায্য চাইতে থাকা। কোনো ধরনের অসদুপায় অবলম্বন থেকে বিরত থাকা। তিনি নিজের বান্দাদের প্রয়োজন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ অবহিত রয়েছেন। তিনি তাদের প্রয়োজনের দিকেও নজর রাখেন, (সুরা শূরা-২৭)। কেননা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে পৃথিবীতে ১ সেকেন্ড সময়ও বেঁচে থাকার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ বলেন, যদি তিনি তোমাদের জীবিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেন, তাহলে এমন দ্বিতীয় আর কে আছে যে তোমাদের রিজিক সরবরাহ করতে পারে, (সুরা মুলক-২১)। প্রিয় নবী বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :  যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখ, তবে তিনি তোমাদের সেইমতো রুজি দান করবেন, যেমন পাখিদের দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফিরে। (তিরমিযী) মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, সালাত সমাপ্ত করে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় ও আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ কর, হয়তোবা তোমরা সফলকাম হবে। তিনি সন্তুষ্ট হয়ে, আমাদের সব কষ্ট, অভাব-অনটন দূর করে, রিজিকে বরকত দান করবেন। ইনশাআল্লাহ।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর