২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৭:৫৪

আনসারদের উদ্দেশে বিশ্বনবীর ভাষণ

সাইফুল ইসলাম তাওহিদ

আনসারদের উদ্দেশে বিশ্বনবীর ভাষণ

মক্কায় যখন ইসলামের প্রচার-প্রসার কঠিন হয়ে যায় তখন রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন। ইসলামের কঠিন সময়ে মুসলিমদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা মদিনাবাসী ‘আনসার’ নামে খ্যাত। ইসলামে তাদের বিশেষ মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। অষ্টম হিজরিতে হুনাইন যুদ্ধের পর তাদের উদ্দেশে রাসুল (সা.) একটি ভাষণ দিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে আনসারদের বিশেষ মর্যাদা সুস্পষ্ট হয়। ইসলামের ইতিহাসে তাঁর বক্তব্যটি বিশেষভাবে স্মরণীয়। আবু সাইদ আল-খুদরি (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুনাইন যুদ্ধের পর রাসুল (সা.) (হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্র থেকে) অনেক যুদ্ধলব্ধ সম্পদ পেয়েছিলেন। তিনি কুরাইশ ও আরবের বিভিন্ন গোত্রের লোকদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে সেই সম্পদ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। কিন্তু তাতে আনসারদের সামান্য কোনো অংশও ছিল না। ফলে তা নিয়ে অনেক কানাঘুষা শুরু হয়। এক পর্যায়ে কেউ বলে ফেলে যে আল্লাহর শপথ, ‘রাসুল (সা.) নিজ জাতিকে (সহযোগী হিসেবে) পেয়ে গেছেন।’

এ কথা শুনে সাআদ বিন উবাদাহ (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন যে হে আল্লাহর রাসুল, আনসারদের অন্তরে আপনার ব্যাপারে নানা কিছু বিরাজ করছে। এমনকি তাদের একজন বলে বসেছে যে রাসুল (সা.) নিজ জাতিকে (সহযোগী হিসেবে) পেয়ে গেছেন। রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, কোন বিষয়ে? সাআদ (রা.) বললেন, আপনি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আপনার গোত্র ও সব আরব গোত্রের মধ্যে বণ্টন করেছেন অথচ এর অংশ তাদের দেওয়া হয়নি। রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, হে সাআদ, এই বিষয়ে তোমার মতামত কী? তিনি জবাব দেন যে আমি তো আমার গোত্রের একজন সদস্য। রাসুল (সা.) বললেন, আচ্ছা, আমার কাছে তোমার গোত্রের সবাইকে একটি বড় স্থানে একত্র কোরো। অতঃপর সাআদ (রা.) বের হয়ে আনসারদের একত্র করেন। তখন অনেক মুহাজির সাহাবিও আসেন। রাসুল (সা.)-কে জানালে তিনি এসে আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করে বক্তব্য শুরু করেন।

অতঃপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আনসার জনতা, তোমরা কি পথভ্রষ্ট হিসেবে ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের হেদায়াত দেননি? এবং তোমরা কি অভাবী ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রাচুর্য দেননি? তোমরা কি একে অন্যের শত্রু ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করেননি?’ তখন সবাই বলল, বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অধিক অনুগ্রহকারী ও মর্যাদাবান। রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আনসার জনতা, তোমরা কি জবাব দেবে না?’ তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা কিভাবে জবাব দেব? সব প্রশংসা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, তোমরা চাইলে বলতে পারো। তোমরা কথা বললে সত্য বলবে এবং তোমাদের সত্যায়ন করা হবে।’ আপনি আমাদের কাছে বিতাড়িত হয়ে এসেছিলেন, আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি। আপনি ভীত হয়ে এসেছিলেন আমরা নিরাপত্তা দিয়েছি। আপনি অসহায় হয়ে এসেছিলেন আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি। তারা বলল, সব প্রশংসা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য।

রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আনসার সম্প্রদায়, তোমরা কি দুনিয়ার সামান্য বিষয়ে কষ্ট পেয়েছ? আমি তো ইসলাম গ্রহণকারী লোকদের আকৃষ্ট করতে চেয়েছি। আর আল্লাহর মনোনীত ইসলামের জন্য তোমাদের বিষয়টি সোপর্দ করেছি। হে আনসার সম্প্রদায়, তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে সবাই উট ও ভেড়া নিয়ে যাবে এবং তোমরা আল্লাহর রাসুলকে তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে? ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি মানুষ এক পথে চলে এবং আনসাররা আরেক পথে চলে তাহলে আমি আনসারদের পথেই চলব। যদি হিজরত করতে না হতো তাহলে আমি আনসারদের একজন হতাম।’

অতঃপর আনসার সম্প্রদায় এমনভাবে কাঁদল যে তাদের দাড়ি ভিজে গেল। তারা বলল, আমরা রব হিসেবে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁর রাসুলের বণ্টনের ব্যাপারেও সন্তুষ্ট। অতঃপর রাসুল (সা.) ফিরে যান এবং তারাও চলে যায়। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১৭৩০)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর