২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৮:১৬

ইসলাম বংশীয় ভেদাভেদ সমর্থন করে না

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

ইসলাম বংশীয় ভেদাভেদ সমর্থন করে না

মানুষ শ্রেষ্ঠ জাতি। মানুষ হওয়াই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ পরিচয়। শ্রেষ্ঠত্বের জন্য জাত, বংশ, গোষ্ঠী ইত্যাদির কোনো ভূমিকা নেই। নেই এসবের কোনো প্রয়োজন। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সম্মানিত করেছেন, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয় আমি আদমসন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭০) এক আদম ও হাওয়া থেকে আদম জাতির সূচনা। বংশ-জাতি, বর্ণ, শ্রেণি-পেশা ও ভাষার বৈচিত্র্য কালের আবর্তনে তৈরি হয়েছে শুধু পরিচয়ের মাধ্যম হিসেবে। সাদা-কালো, ধনী-গরিব এবং বংশীয় উঁচু-নিচু কোনো মানুষের সম্মান বাড়ায় না, কমায়ও না। বস্তুত সবাই আদম বংশের মানুষ। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কতিপয় জনগোষ্ঠী তাদের মৃত বাপ-দাদাকে নিয়ে গর্ব করবে অথচ তারা নিশ্চিত জাহান্নামের কয়লা অথবা তারা আল্লাহতায়ালার কাছে মলকীটের চেয়েও নিকৃষ্ট, যে মলকীট তার নাক দিয়ে মল-ময়লা ঠেলতে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তোমাদের থেকে জাহিলি যুগের হঠকারিতা অপসারণ করেছেন। মূলত মানুষ হয়তো মোমিন খোদাভীরু অথবা হতভাগা পাপী। সব মানুষই আদমসন্তান আর আদমকে তো মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (তিরমিজি) আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মানবসমাজ তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত ১)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘হে মানুষ আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে সর্বাধিক খোদাভীরু।’ (সুরা আল হুজুরাত, আয়াত ১০) ইসলাম ধর্মে জাতি-গোষ্ঠীর কোনো ভেদাভেদ নেই। কোনো এক বংশকে অন্য বংশের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার বিধান নেই। নেই বংশ নিয়ে গর্ব করার কোনো সামান্য অধিকার। মানুষের জন্ম কোথায়, কোন পরিবারে এর ওপর নির্ভর করে মানমর্যাদা নির্ধারণ হয় না এ ধর্মে। হয় না অধিকার আদায়ের মাধ্যম। বংশের ভিত্তিতে ইসলাম ধর্মে প্রদান করা হয় না কোনো পদপদবি। এ ধর্মে নেই সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবৈষম্যের অস্তিত্ব। রসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘অনারবদের ওপর আরব দেশের লোকের এবং আরব দেশের লোকের ওপর অনারবদের কোনো মর্যাদা নেই। কৃষ্ণাঙ্গের ওপর লাল বর্ণের লোকের, লাল বর্ণের লোকের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সম্মান-মর্যাদা কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে।’ (আহমদ) অধুনা বিশ্বে জাতিভেদ, বংশ নিয়ে গর্ব, বর্ণবাদ ও শ্রেণিবিদ্বেষের ফলে মানবতা হুমকির মুখে। ইসলাম ভাষা-বর্ণ, গোত্র ও দেশকে মর্যাদার মানদণ্ড নির্ণয় করেনি। মানুষের ঐক্যের মাপকাঠি হিসেবেও তা নির্ধারণ করা হয়নি। বরং এসব ন্যক্কারজনক অপকর্ম সমূলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসলাম। রসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে জাহিলি যুগের চারটি কাজ চালু থাকবে, তারা তা বর্জন করবে না। সেগুলো হলো- বংশ নিয়ে গর্ব, বংশ নিয়ে আঘাত, রাশিফলের বিশ্বাস, মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিলাপ করা।’ (মুসলিম)

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর