সন্তান জন্মদানের পর একজন মায়ের প্রধান দায়িত্ব তাকে দুধ পান করানো। সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশে মাতৃদুগ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসলাম এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এর মাধ্যমে মা-সন্তান উভয়ের সুস্বাস্থ্য ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
দুধ পান করানোর মেয়াদ
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী, সন্তানকে চান্দ্র মাসের হিসাবে দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাতে হয়। দুই বছরের পর দুধ পান করানো জায়েজ নয়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘মায়েরা নিজেদের বাচ্চাদের পূর্ণ দুই বছর স্তন্য দান করবে, যদি দুধ খাওয়ার মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আর আমি মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি।
তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার এবং তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৪)
মায়ের জন্য শিথিল বিধান
আল্লাহ তাআলা স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য রোজার হুকুম শিথিল করে দিয়েছেন।
দুগ্ধদানকারী মা রোজা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পায় আর ওই সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্ত না হয় তাহলে সন্তানের মৃত্যু বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা দেখা দিলে তিনি রোজা ভাঙতে পারবেন এবং পরে কাজা আদায় করবেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা মুসাফির থেকে অর্ধেক নামাজ ও রোজা কমিয়ে দিয়েছেন আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাদের জন্য রোজা পালন মাফ করে দিয়েছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৫)
দুধ পান না করানোর শাস্তি
স্তন্যদান শুধু একটি প্রাকৃতিক কাজ নয়, এটি একটি ইবাদত ও সন্তানের হকের অন্তর্ভুক্ত। শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া কোনো নারী যদি সন্তানকে বুকের দুধের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে পরকালে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। রাসুল (সা.) মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এরপর আমাকে আরো সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।
কয়েকজন নারীকে দেখলাম, যাদের বুকের ছাতি সাপ দংশন করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কোন নারী? বলা হলো, তারা সেইসব নারী, যারা নিজের শিশুকে নিজের দুধ পান করাত না।
(মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ২৮৩৭)
একটি সমস্যা ও তার সমাধান
একজন মা তার সন্তানের জন্মের আগে থেকেই অনেক ত্যাগ ও অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করেন। আবার ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও দুই বছর পর্যন্ত স্তন্যদানের কঠিন ঝামেলা সহ্য করেন। এ সময় বেশির ভাগ মাকে সন্তানদের কামড় সয়ে যেতে হয়। এই সমস্যাটি সন্তানের দাঁত ওঠা, খেলা করার অভ্যাস বা সাময়িকভাবে দুধ পান করতে না পারার কারণে হয়ে থাকে। এর প্রাথমিক সমাধান হলো, শিশু কামড় দিলে জোরে চিৎকার বা রাগ না করে শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো। চিৎকার করলে শিশুটি হয়তো ভয় পাবে বা এটিকে খেলার অংশ ভেবে আরো কামড় দিতে পারে। শিশু কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে হবে। এতে শিশুটি বুঝবে যে এটি ঠিক কাজ নয়। ক্ষুধার্ত অবস্থায় দুধ পান করানোর চেষ্টা করা উচিত। শিশুটি যদি ক্ষুধার্ত না হয়, তাহলে সে দুধ পান করার সময় খেলতে পারে। তাই সর্তকতার কোনো বিকল্প নেই।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন