ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষক ও গবেষক ড. আব্দুস সাত্তার সিদ্দিকী ছিলেন জ্ঞানান্বেষীদের জন্য অনুসরণীয়। তিনি তাঁর জ্ঞান ও অধ্যবসয়ের মাধ্যমে পণ্ডিতমহলের স্বীকৃতি ও সমীহ অর্জন করেন। ড. আব্দুস সাত্তার সিদ্দিকীর জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষাজীবন সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তিনি ১৯১০ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন এবং ১৯১২ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
এরপর ১৯১২ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ গমন করেন। ১৯১২-১৩ সাল পর্যন্ত University of Strass burg-এ প্রফেসর লিটম্যান থাম্বের অধীনে আরবি ও ফারসি সাহিত্যে জ্ঞানার্জন করেন। তারপর ১৯১৩-১৯১৯ পর্যন্ত University of Goettingen থেকে আরবি, হিব্রু, ইরানি, ইংরেজি ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সেপ্টেম্বর ১৯১৯ সালে Persian loan- Words in classical Arabic অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন Professor F C Andreas.
পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর ড. আব্দুস সাত্তার ভারতবর্ষে ফিরে আসেন এবং আলীগড় এম এ ও কলেজের আরবি বিভাগে রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি এখানে শিক্ষকতা করেন। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই হায়দারাবাদ ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯২৪ পর্যন্ত কর্মরত থাকেন। এরপর কিছুদিনের জন্য এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলো হিসেবে কাজ করেন।
ড. সিদ্দিকী ২৬ মার্চ ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রফেসর এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি কয়েক মাস বিলম্বে ১ নভেম্বর ১৯২৪ সালে উক্ত পদে যোগদান করেন। তবে ১ নভেম্বর ১৯২৭ সাল থেকে তাঁকে বিভাগে স্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ১৯২৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে তৎকালীন মুসলিম হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ৪ জুলাই প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় ২৮ আগস্ট ১৯২৮ সালে তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও ফারসি বিভাগের প্রফেসর হিসেবে যোগদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের জন্য বিনা বেতনে ছুটির আবেদন করেন।
১ নভেম্বর ১৯২৮ সাল থেকে তাঁকে দুই বছরের জন্য ছুটি প্রদান করা হয়। এ ছুটিতে থাকাবস্থায় স্ত্রীর অসুস্থতার দরুন তিনি ২৯ মার্চ ১৯৩০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। ৩ এপ্রিল ১৯৩০ সালে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভায় তাঁর পদত্যাগ গৃহীত হয়। তিনি ১৯৭২ সালে ইন্তেকাল করেন।
আব্দুস সাত্তার সিদ্দিকীর উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্মগুলো হলো-
ক. বই
১. ১৯১৬ সালে জার্মান ভাষায় প্রফেসর লিটম্যানের সঙ্গে যৌথভাবে রচনা করেন Harut and Marutœ
খ. প্রবন্ধ
১. Sawda-Encyclopedia of Islam, Vol. II, Fasciculus, D.J Brill, Leyden 1926.
২. Shibli Numani: Encyclopedia of Islam, 1926.
৩. Construction of Clock and Islamic Civilisation; Islamic Culture, Hyderabad, April 1927.
৪. Is Guava the real name of amrud? The Journal of the Royal Asiatic Society, London, July 1927.
৫. Siddiq Hasan, The Encyclopedia of Islam, Vol. II, Fasciculus G, Leyden, 1927.
৬. The Letter Qaf and its importance in persian loan-words in Arabic, The proceedings of the Fourth Oriental Conference, (held in Allahabad in November 1926), vol. Ii, pp. 223-232.
৭. ১৯১৭ সালে জার্মান ভাষায় লিখিত Zeichnungen von Riza Abbasiœ নামক গ্রন্থের ওপর প্রফেসর লিটম্যান ও প্রফেসর আন্দ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি রিভিউ লেখেন।
৮. ১৯১৮ সালে Perisian and Indian Miniature painting শীর্ষক প্রবন্ধ লেখেন।
গ. প্রবন্ধ পাঠ
১. প্রফেসর সিদ্দিকী নভেম্বর ১৯২৮ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত Oriental Conference-এ যোগদান করেন এবং Fairs in Pre-Islamic অত্ধনরধ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
২. ১৯২৬ সালে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে তিনি Wilson philological lecture প্রদান করেন।
৩. ১৯২৬ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত 4th Oriental Conference-এ যোগদান করেন এবং The letter Qaf and its importance in Persian loan words in Arabic শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ