গোর্খা জনগোষ্ঠী ও অন্য দেশীয় সম্প্রদায়কে গৃহহীন করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র করে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম) সভাপতি বিমল গুরুং। শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়ে এই মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন জিজেএম’এর প্রভাবশালী নেতা গুরুং।
তিনি জানান ‘আমি আমাদের দলীয় কর্মী ও অন্য সূত্রের মাধ্যমে খবর পাচ্ছি যে আমাদের এই এলাকায় বেশ কিছু নতুন মানুষের গতিবিধি দেখা গেছে। যাদের অধিকাংশই হিন্দিতে কথা বলতে পারেন না। আমাদের আশঙ্কা এরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং এদেরকে একপ্রকার জোর করে এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই এলাকায় বসবাসকারী গোর্খা, আদিবাসী, রাজবংশী এবং অন্য ভারতীয় বাঙালি জনজাতির অস্তিত্বকে নি:শ্বেষ করতেই এই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে এই অঞ্চলের মূল বাসিন্দাদের বিচ্ছিন্ন করতে এবং আমাদের গৃহহীন করতে এই ভয়ানক পরিকল্পনাগুলি নেওয়া হচ্ছে’।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করে বিবৃতিতে গুরুং জানান ‘কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তি তাদের ভোট ব্যাংকের জন্য রোহিঙ্গাদের এই অঞ্চলে আশ্রয়ের অনুমতি দিয়েছে এবং জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েই তারা ভোটের রাজনীতি করছে। এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষকে আমি সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আপনার সামনে এই ধরনের অশুভ ঘটনা ঘটলেই তা যেন জানানো হয়’।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং’এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিমল গুরুং জানান, ‘আমি আশা করবো এই অঞ্চলে যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বিস্তারিত তথ্য নেবেন এবং এই ‘ভয়ানক পরিকল্পনা’ নষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন’।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, তরাই এবং ডুয়ার্স-এর সাথে প্রতিবেশি ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে এবং এই অঞ্চলের উপরে তিব্বত অবস্থিত। স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলটি ভূতাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও কৌশলগত সীমান্ত এলাকা কারণ এই অঞ্চল দিয়েই উত্তর ভারতের সাথে ভারতের অন্য অংশের যোগাযোগ রক্ষা করা হয়’।
উল্লেখ্য গত বছরের আগষ্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নতুন করে সহিংসতা তৈরি হওয়ায় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। ভারতেও আশ্রয় নিয়েছে কয়েক হাজার। সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। কিন্তু দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এই রোহিঙ্গাদের দেশে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রের বক্তব্য ‘রোহিঙ্গা দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় হুমকি, তাই তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে’।
কিন্তু কেন্দ্রের ওই নীতির সমালোচনা করে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে এই বিষয়টি দেখা উচিত’। মমতার অভিমত ছিল সকল উদ্বাস্তুরাই সন্ত্রাসী নয়।
বিডি প্রতিদিন/২৭ এপ্রিল ২০১৮/হিমেল