ভারতের উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় একজন সংখ্যালঘু মুসলিম প্রার্থী না থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে ভারতের এই হিন্দুত্ববাদী দলটি। মুসলিম ভোট টানতে রাজনৈতিক কৌশলগত পরিবর্তন বিজেপি’র। আসন্ন নির্বাচনে ৮৫০ জনেরও বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছে তারা। বিজেপি সূত্রে খবর এর আগে রাজ্যের কোন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এত বেশি সংখ্যায় সংখ্যালঘু প্রার্থী দাঁড় করায়নি বিজেপি। শেষবার ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৭০ জনের মতো সখ্যালঘু প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছিল তারা। আর এবার সেই সংখ্যা প্রায় ১২ গুণ বেশি।
আগামী বছরেই দেশটিতে লোকসভার নির্বাচন। তার আগে বিজেপি এভাবে মুসলিম প্রার্থী দিয়ে আসলে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় মোদি ঝড়কে দেখে নিতে চাইছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
যদিও বিজেপির সংখ্যালঘুদের কাছে টানার পরিকল্পনার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব ও রাজ্যটির শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি জানান, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির ওপরই রাজ্যের সংখ্যালঘুদের আস্থা রয়েছে। দলের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমাদের ওপর সংখ্যালঘুদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে’। তাঁর অভিযোগ ‘বিজেপি সংখ্যালঘুদের মনোনয়ন দিয়েছে এবং রাজ্যে দাঙ্গা সৃষ্টির ইন্ধন দিচ্ছে’।
২০১৬ সালে রাজ্য বিধানসভার ২৯৪ আসনের নির্বাচনে মাত্র ৬ জন মুসলিম প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এবার এই পরিবর্তন কেন? সে সম্পর্কে বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি আলি হোসেন জানান, ‘দলের রাজনৈতিক কৌশলে একটা বড় বদল ঘটানো হয়েছে-যেখানে আরও বেশি সংখ্যায় মুসলিম প্রার্থীকে দাঁড় করানো হয়েছে। এটা সত্যি যে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি রাজ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। সেই সংখ্যালঘুদের কাছে আমাদের পৌঁছতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাও বুঝতে পেরেছে যে বিজেপি আর তাদের শত্রু নয়’। তিনি আরও জানান, ‘রাজ্যের যেসব জায়গায় মুসলিম মানুষের বাস বেশি মূলত সেখানেই তাদের প্রার্থীকে দাঁড় করানো হয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মুসলিম প্রার্থীকে প্রার্থী করা হয়েছে’।
তবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২০০০ হাজারেও বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থীকে দাঁড় করানো যেতো বলে মনে করেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গে আমাদের দল দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মুসলিমরাও মানছে যে বিজেপি উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমরা (বিজেপি) কেন্দ্রের পাশাপাশি বিশটি রাজ্যে সরকার চালাচ্ছি। মুসলিমরাও শান্তিতে বাস করছে এবং কোন সমস্যা নেই’।
প্রার্থীদের জেতার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনেও দল এই কৌশল অবলম্বন করবে বলে জানান তিনি। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমরা ধর্ম বা জাতি দেখে নির্বাচনে টিকিট দেবো না, জেতার যোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করেই টিকিট দেওয়া হবে’।
বিজেপি সূত্রে খবর, এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে এত বেশি সংখ্যায় মুসলিম প্রার্থী দেওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে এক সময়ের তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়ের। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এই পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতা কেবলমাত্র মুসলিমদের টিকিট দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করেননি, তৃণমূল ও বামফ্রন্টের বিদ্রোহী নেতাদের নিজেদের দলে এনে পদ্মফুলের প্রার্থী করেছেন।
কংগ্রেস ও সিপিআইএম-কে পিছনে ফেলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দাঁড় করানোর ঘটনায় তৃণমূলের পরেই রয়েছে বিজেপি। আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে কার কত গ্রহণযোগ্যতা-তা পরখ করে নিতে প্রতিটি দলের কাছেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই নির্বাচন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ৩৩৫৮ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮,৬৫৬টি আসনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৬,৮১৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯২১৭টি আসনের মধ্যে ৩০৫৯ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তারা। ২০টি জেলা পরিষদের ৮২৫ আসনের মধ্যে ২০৩ আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটি।
উল্লেখ্য, ত্রিস্তরীয় গ্রাম পঞ্চায়েত ভোট আগামী ১৪ মে, গণনা আগামী ১৮ মে। মোট ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮ লাখের কিছু বেশী।
বিডি-প্রতিদিন/০৬ মে, ২০১৮/মাহবুব