ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নানা আয়োজনে আজ বুধবার (২৫ বৈশাখ) শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান। সারা দিন ভরেই স্কুলে, ক্লাবে, পাড়ায়-পাড়ায় প্রভাতফেরি, নাটক, গান, নৃত্য, আর কবিতা পাঠের আসরের আয়োজন করা হয়েছে। ছোট বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবাই মেতে উঠেছিলেন গুরুদেবকে নিয়ে।
এদিন সকালে কবিগুরুর জন্মস্থান কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে রবীন্দ্রসুর ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য জুড়ে। কবির ‘হে নুতন দেখা দিক আরবার...’ গানের মধ্যে দিয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানের শুরু হয়। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। উদ্বোধনী সঙ্গীতের পর কবির জন্মকক্ষে, প্রয়াণকক্ষে ও কবির মূর্তিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বলেন, ‘জন্মের ১৫৭ বছর পর আজও রবীন্দ্রনাথ সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। এত বছর পরও এখনও বাঙালির মনন, বাঙালির চিন্তা, বাঙালির শোক, বাঙালির আনন্দ-বাঙালির যে কোনো ধরনের অনুভূতিকে প্রকাশ করতে গেলে রবীন্দ্রনাথের স্মরণাপন্ন হতে হয়। এখানেই তাঁর রচনা, তাঁর কৃতিত্বের চিরন্তন চরিত্র আমাদের সামনে ফুটে ওঠে’। নোবেল জয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শতাব্দী ধরে বাঙালীর তথা ভারতের গর্ব। আজকের দিনেও সারা বিশ্ববাসী তাঁর কবিতা, শিল্প, সাহিত্য ও গান উপভোগ করেন’।
শান্তিনিকতেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করা হচ্ছে কবিগুরুকে। এদিন ভোরে বৈতালিকের মধ্যে দিয়ে কবিপ্রণামের সূচনা হয়। বৈশাখের তীব্র দহনকে উপেক্ষা করেই অসংখ্য রবীন্দ্র অনুরাগী সেজে উঠেছিলেন নতুন পোশাকে, ফুলের মালায়। কবিগুরুর গানে, কবিতায় আকাশ-বাতাশ মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক।
অন্যদিকে ভাষা ও চেতনা সমিতির উদ্যোগে এদিন সকালে উল্টোডাঙার নর্থ সিটি নার্সিংহোমের সামনে থেকে শুরু হয় ভ্রাম্যমাণ রবীন্দ্রজয়ন্তী। অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভাষা ও চেতনা সমিতির আহ্বায়ক ইমানুল হকসহ সমিতির সদস্যরা। এরপর তা মানিকতলা খালধার-রাজাবাজার-জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি-ঢাকুরিয়া-গড়িয়াহাট-রাসবিহারী হয়ে পৌঁছয় রবীন্দ্রসদন চত্বরে। গোটা পথেই গান, কবিতা, নাচ, নাটক পরিবেশন করেন ছোট ছোট শিশুরা।
এদিন, বিকেল পাঁচটায় কলকাতার রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন ক্যাথিড্রাল রোডের মঞ্চে রবীন্দ্র জন্মোৎসবের সূচনা করবেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীরা।
কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্যুইট বার্তায় মোদি জানান, ‘গুরুদেব ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে আমার প্রণাম। তিনি ছিলেন একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব, ভারতের ইতিহাসে ও সমৃদ্ধশালী সাহিত্যকর্মে যাঁর অবদান সর্বদা স্মরণ করার মতো’।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ মে, ২০১৮/মাহবুব