ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’এর রক্ষণবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১০ কোটি রুপির অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর হাতে এই চেক তুলে দেন কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মিশনের কাউন্সেলর বিএম জামাল হোসেন, কাউন্সেলর মনসুর আহমেদ, ফার্স্ট সেক্রেটারি মোফাকখারুল ইকবাল, বাংলাদেশ ভবনের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি সুনীল কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
এ ব্যপারে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, ‘বাংলাদেশ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ এই ১০ কোটি রুপি দেওয়া হয়েছে। মূল অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদের রুপি দিয়েই ভবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম করা হবে।’
মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় জানান, ‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম, ব্যয়ভারসহ সমস্ত কাজ ঠিকঠাক ভাবে চলতে পারে-সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন ১০ কোটি রুপি অর্থ মঞ্জুর করেছিল। সেই মতোই এদিন ওই অর্থমূল্যের চেকটি তুলে দেওয়া হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও খুব শ্রদ্ধা ও সানন্দের সাথে এই অর্থ গ্রহণ করেছি। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর স্মারক হিসেবে নির্মিত এই ভবনটিকে যথাযথভাবে চালিয়ে নিতে যেতে এই মূল অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদের রুপি ব্যায় করা হবে।’
প্রতিবেশী দেশের কাছে তাঁর প্রত্যাশা, ‘সে দেশের সরকার যেভাবে আমাদের সহায়তা করেছেন এবং উদ্যোগী হয়ে এমন একটি ভবন নির্মাণ করেছেন-এটাকে বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভবন যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেও বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা যেন বজায় থাকে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের লক্ষ্য হিসেবে শান্তিনিকতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালের মার্চে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি মেমোরান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যাডিং (মউ) চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। পরে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া জমি ও বাংলাদেশ সরকারের ২৫ কোটি টাকা অর্থায়নে নির্মিত হয় ভবনটি। ভবনটি তৈরি করে ভারত সরকারের ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন’ (এনবিসিসি)।
২০১৮ সালের ২৫ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে এই ভবনটির দ্বার উন্মোচন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ভবনের গ্রন্থাগার, সেমিনার হল, জাদুঘর সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
শান্তিনিকতেন গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ভবনটিতে বাংলাদেশের শিলাইদহে থাকাকালীন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত কবিতা, গান ও বিভিন্ন মুহূর্তের ছবিসহ বাংলাদেশের ইতিহাস রয়েছে। ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ডাক টিকিট, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারের একাধিক নির্দেশন রয়েছে এখানে। এছাড়াও সুলতান যুগের বিভিন্ন মুদ্রা, ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা, পনেরো-ষোল শতকের মাটি খনন করে প্রাপ্ত টেরাকোটার মূর্তিসহ একাধিক মূল্যবান প্রত্মতাত্মিক নির্দশন রয়েছে এখানে।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ জানুয়ারি, ২০১৯/মাহবুব