ভারতে লোকসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে অল আউট আক্রমণে যেতে চাইছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচারণা দিয়েই ঝড় তুলতে চাইছে বিজেপি। তাদের দাবি মোদির সভার মধ্যে দিয়েই আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটা পরিবর্তনের খেলা শুরু হবে।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বাংলায় ‘রথযাত্রা’ স্থগিত হওয়ায় হেভিওয়েট নেতাদের রাজ্য সফর বাতিল হয়েছে। তার বিকল্প হিসাবে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ এর মোড়কে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় গেরুয়া শিবিরের সভা নিয়েও বিস্তর পানি ঘোলা হয়েছে। তাই মোদিসহ কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃত্বকে রাজ্যের নির্বাচনী প্রচারণায় এনে কর্মী-সমর্থকদের ভেঙে যাওয়া মনোবল চাঙ্গা করতে চায় বিজেপি।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া উত্তরচব্বিশ পরগনা জেলার ঠাকুরনগরে প্রথম সভাটি করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। ওইদিনই দুপুরে বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে দ্বিতীয় সভা করবেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সফরে এসে উত্তরবঙ্গের কুচবিহারে সভা করবেন মোদি।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি, পানি ও স্যানিটেশন মন্ত্রী উমা ভারতী, বস্ত্রীমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিমন্ত্রী গিরিরাজ সিং, কেন্দ্রীয় নেতা শাহনাজ হুসেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, ছত্তিশগড়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং-এর মতো নেতারাও বিভিন্ন সময় এরাজ্যে প্রচারণা সারবেন। সেই সাথে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, রাহুল সিনহা, নারী নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি, রূপা গাঙ্গুলীরা তো থাকছেই।
যদিও অমিত শাহ, বিপ্লব দেব, গিরিরাজ সিং, সুশীল মোদির মতো কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যেই বাংলায় প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবারই কাঁথিতে একটি জনসভা থেকে তৃণমূল সরকারকে তোপ দেগে রাজ্য থেকে উপড়ে ফেলার ডাক দিয়েছেন শাহ। আরামবাগে অন্য একটি সমাবেশ থেকে মমতার সরকারকে কৌরব বংশের সাথে তুলনা টেনে এই সরকারকে দ্রুত ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দেন বিপ্লব দেব।
পরিসংখ্যান বলছে এই প্রথম বাংলাতে এত বিশাল সংখ্যায় কেন্দ্রীয় নেতাদের এনে রাজনৈতিক প্রচারণা করতে চলেছে বিজেপি। সূত্রের খবর, ছোট-বড় মিলিয়ে নির্বাচনের আগে বাংলায় অন্তত তিন শতাধিক সভা করতে যাচ্ছে তারা। গেরুয়া শিবিরের ধারনা আগামী লোকসভা নির্বাচনে দেশে সমস্ত অ-বিজেপি রাজ্যগুলির মধ্যে বাংলাতেই সবথেকে ভালো ফল হবে। দলের সভাপতি অমিত শাহও এরাজ্য থেকে অন্তত ২৩ টি আসনে জেতার রক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন। বর্তমানে এরাজ্যে বিজেপির লোকসভা আসন ২টি। একটি আসানসোল অন্যটি দার্জিলিং কেন্দ্র। আর এই আসন সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যেই আরও বেশি করে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে তারা।
২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে-তার সবকয়টিতেই তাৎপর্যপূর্ণ ফল করেছিল বিজেপি। বহু আসনে কংগ্রেস, সিপিআইএম-কে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় আসনে উঠে আসে বিজেপি। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সহ পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতে দারুন ফল করে বিজেপি।
রাজ্যের যে আসনগুলিতে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা ৬০-৭০ শতাংশের বেশি সেই সব আসনগুলিতে বিজেপি ইতিমধ্যেই নীল নকশা সেরে ফেলেছে। এই আসনগুলি রাজ্যটির উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ এবং আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ যুব নেতা জানান ‘আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির প্রধান লক্ষ্য উত্তরবঙ্গের বালুরঘাট, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, মালদা আসন। দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, কৃষ্ণনগর, হাওড়া, বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রগুলি।’
এদিকে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যেমন বাংলাকে তাদের পাখির চোখ হিসাবে দেখছে। তেমনি এরাজ্যের পাশাপাশি উত্তরপূর্ব ভারত সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও এবার প্রার্থী দিতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ও সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘লোকসভায় আমাদের ৩৪ জন এমপি, রাজ্যসভায় ১৩ জন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আগামী নির্বাচনে ১৪ টি রাজ্যে প্রার্থী দেবো।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল