‘৩০ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট-কলকাতা ৭০০০২৬’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দক্ষিণ কলকাতার বাড়ির ঠিকানায় ‘জয় শ্রী রাম’ লেখা পোস্টকার্ড বিতরণের প্রথম ধাপ শুরু করে দিলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং।
সোমবার নিজে হাতে এই প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি।
এর আগে তিনি বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জয় শ্রী রাম’ লেখা ১০ লাখ পোস্টকার্ড পাঠাবেন। সেই মতো সোমবার উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভাটাপাড়া দলীয় কার্যালয়ে বসে নিজে হাতে এই পোস্টকার্ডে মমতা দিদি বলে সম্বোধন করে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান লেখেন অর্জুন। এর পর তাতে নিজের স্বাক্ষরও করেন। সাংসদের পরপরই দলের অন্য কর্মীরাও তাতে হাত লাগান।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের মন্ত্রী, তৃণমূল বিধায়ক ও নেতাদের ঘিরে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দেওয়াকে ঘিরে যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে মমতার যাত্রাপথে বিজেপি সমর্থকদের ওই ধইন কার্যত বিক্ষোভের আকার ধারণ করে।
সম্প্রতি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভাটপাড়া এলাকায় মমতা ব্যনার্জিকে উদ্দেশ্য করে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেওয়ার পরই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার বিকালে নৈহাটিতে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে রাস্তায় একাধিবার মমতাকে উদ্দেশ্য করে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেওয়া হয়। এরপরই চামরা গুটিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মমতা। এমনকি সে সময় মমতার সামনে উপস্থিত থাকা রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র সহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে স্লোগান দেওয়া ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা খুঁজে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। আর এরপরই ভাটপাড়ার এলাকা থেকে ১০ জনকে আটক করে জগদ্দল থানার পুলিশ। যদিও পুলিশের তরফে এই ঘটনায় আটকের কথা অস্বীকার করা হয়।
ওই ঘটনার প্রতিবাদেই শনিবার বিকালে জগদ্দল ও নৈহাটি থানা ঘেরাও-এর ডাক দেন অর্জুন সিং। এসময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবো উনি যেন সুস্থ থাকেন। আমরা জয় শ্রী রাম লেখা ১০ লাখ পোস্ট কার্ড পাঠাচ্ছি ওর বাড়িতে। আমরা দেখতে চাই উনি কতজনকে আটক করতে পারেন।’
গত শনিবারই কাঁচরাপাড়ায় একটি দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে এসে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনির মুখে পড়তে হয় রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পরিকল্পনা ও সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায়, ফায়ার সার্ভিস মন্ত্রী সুজিত বসু, তৃণমূল নেতা মদন মিত্রকে। এক সময় পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বলতে শোনা যায় সাধারণ মানুষ, আপনারা দেখুন কি হচ্ছে? প্রত্যেকটা দলীয় কার্যালয় দখল করেছে। আমি সাধারণ মানুষকে করজোড়ে অনুরোধ করে গেলাম-আপনারাই দেখুন আর কিছু বলবো না। এই বিজেপি সন্ত্রাস করছে, লুঠ করছে।’
এদিকে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনিকে বিজেপি রাজনৈতিক স্লোগানে রূপান্তরিত করে জনমানসে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় মারফত এই স্লোগান বিতর্কের প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। ফেসবুকে তিনি জানান, ‘সব দলেরই কিছু নির্দিষ্ট স্লোগান রয়েছে। তা নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই। তারা যেমন ‘বন্দে মাতরম’, ‘জয় হিন্দ’, বলেন তেমনই বামপন্থীরা ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলে। এই সমস্ত স্লোগানকেই বাংলা সম্মান করে।...কিন্তু বিজেপি জয় শ্রী রামকে দলের স্লোগানে পর্যবেশিত করে ধর্মের সাথে রাজনীতিকে মিশিয়ে দিয়েছে।’
বিজেপির ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে যখন তৃণমূল কোণঠাসা ঠিক তখনই বিজেপিকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দলের সভাপতি অমিত শাহকে উদ্দেশ্য ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় হিন্দু’ লেখা ২০ লাখ কার্ড পাঠাবে তারা।
তবে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি শুনে মমতা বা দলের নেতাদের বিরক্ত হওয়ার কারণে আখেরে তৃণমূলেরই ক্ষতি হচ্ছে। আর উল্টে বাড়তি অক্সিজেন পাচ্ছে গেরুয়া শিবির।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন