পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ফল নিয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতেই যেতে চলেছে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। এমনটাই জানালেন ওই কেন্দ্র থেকে পরাজিত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মমতা ব্যানার্জি। রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল জয়েও একমাত্র কাঁটা নন্দীগ্রামে দলনেত্রীর পরাজয়।
রবিবার ভোটগণনার দিন সকাল থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছিল মমতা ও শুভেন্দুর মধ্যে। শেষমেষ বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে জানা যায়, ১২০০ ভোটে নন্দীগ্রামে জিতেছেন মমতা। যদিও আধা ঘণ্টার মধ্যেই আবার জানা যায়, ওই কেন্দ্রে মমতাকে ১৯৫৬ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে খবর, শুভেন্দুর প্রাপ্ত ভোট ১,১০,৭৬৪ অন্যদিকে মমতার প্রাপ্ত ভোট ১,০৮,৮০৮, সিপিআইএম প্রার্থী মীনাক্ষি মুখার্জি পেয়েছেন ৬২৬৭ টি ভোট।
স্বাভাবিকভাবেই একবার জয়, পরক্ষণেই পরাজয় ঘোষণার ফল মানতে রাজি হয়নি তৃণমূল। ফল প্রকাশের পরই পুনর্গণনার দাবি জানায় তারা। কিন্তু কমিশন তাতে সম্মতি দেয়নি।
গণনার ২৪ ঘণ্টা পর সোমবার দুপুরে কালীঘাটে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঘুরিয়ে সেই কারচুপির অভিযোগ তুলে আদালতে যাবার রাস্তাও খোলা রাখলেন তৃণমূল নেত্রী। সেই সাথে নিজের মোবাইলের একটি মেসেজ উল্লেখ করে এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনেন তিনি। তার দাবি পুনর্গণনার আদেশ দিলে ওই কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার (আরও) খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, তাই তা দেওয়া হয়নি। মমতার এই মন্তব্যেই রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড়।
এদিন নন্দীগ্রাম সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে দল ভাবনা-চিন্তা করছে।’ এরপরই তিনি বলেন, ‘রাত ১১টা নাগাদ আমি একটা এসএমএস পাই। কারও কাছ থেকে আমি সেটা পেয়েছি। যেখানে নন্দীগ্রামের রিটার্নিং অফিসার (আরও) তারই এক পরিচিত ব্যক্তিকে লিখেছেন যে ‘আমি যদি পুনরায় গণনার আদেশ দিই তবে আমার ও আমার পরিবারের জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় এক ফল আর একটা জায়গায় অন্য ফল... হঠাৎ করেই ৮ হাজার ভোট হয়ে গেল শূন্য। রবিবার ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সার্ভারকে বিকল করে রাখা হয়েছিল, এরপর ৪০ মিনিট বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল, ইভিএম পাল্টেছে।'
তার অভিমত, ‘এখানে তো ভয়ের কিছু নেই, এটা তো যে কেউ চাইতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন রিকাউন্টিং দিল না কেন? তাদের স্বার্থটা কোথায়? আসলে রিটার্নিং অফিসারকেও বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সব গণমাধ্যমের কর্মী দেখল, নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে দিল, রাজ্যপাল আমাকেও ফোন করল আর এরপরই সব উল্টে গেল! এত বড় মাফিয়াগিরি আমি কোথাও দেখিনি। যাইহোক আমরা এর বিচার চাই। আমরা নিশ্চয়ই আদালতে যাব।’
ওই ফলাফলের বিরোধিতা ও পুনরায় গণনার দাবিতে রবিবার রাত থেকেই উত্তেজনা ছড়ায় হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী মোড়ে। পুনর্গণনার দাবিতে রাতভর সড়ক অবরোধ করে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। এমনকি রাতে জয়ের সনদ নিতে ভোটকেন্দ্রের দিকে আসার পথে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর গাড়িতেও হামলার অভিযোগ ওঠে।
তৃণমূলের ওই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এদিন মমতা বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালট, ভিভিপ্যাট আলাদা করে রাখা হবে- যাতে এগুলি বিকৃত না হয়- ততক্ষণ পর্যন্ত তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের আন্দোলন চলবে।’
মমতার অভিযোগ, ‘ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে দুইজন অবজারর্ভার বসেছিলেন, তারা উভয়েই পক্ষপাতদুষ্ট। তারা বলেছিলেন, যেনতেন উপায়ে মমতা ব্যানার্জিকে পরাজিত করাতে হবে। এটা কী? তারা আমাকে থামাতে পারবেন না।’
মমতার দাবি ‘এই নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসনে জয়ী হয়েছে ঠিকই কিন্তু নির্বাচনে কমিশনের অবদান ছাড়া তারা ৫০ আসনও অতিক্রম করতে পারত না।’
এদিকে নন্দীগ্রামে পরাজয়ের পর প্রশ্ন উঠছে, মমতা ব্যানার্জি কি পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারেন। সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো হ্যাঁ, তিনি পারেন। সংবিধানের ১৬৪ (৪) ধারা অনুযায়ী মন্ত্রী হতে গেলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাকে যে কোনো একটি আসন থেকে উপনির্বাচনে জিতে আসতে হবে। কিন্তু ওই উপনির্বাচনে পরাজিত হলে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে।
এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করেও বা পরাজিত হয়েও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১১ সালেই রাজ্যে যখন প্রথমবার তৃণমূল সরকারে আসে, ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে উপনির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্রে জয়ী হন মমতা। নির্বাচনে না লড়ে ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। পরে উপনির্বাচনে জিতে আসেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ