২৭ মে, ২০২২ ১৯:০২

১১ দিনের জেল হেফাজতে পি কে হালদারসহ ৬ জন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

১১ দিনের জেল হেফাজতে পি কে হালদারসহ ৬ জন

বামে ইনসেটে পি কে হালদার। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার কোটি রুপি আত্মসাৎয়ের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়া পি কে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে ১১ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের (জেল হেফাজত) নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার নগদ দায়রা আদালত। 

১০ দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হয় তাদের। এসময় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী আদালতের কাছে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানান। উল্টোদিকে অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ ঘোষ ও আলী হায়দার চারদিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানান। 

শুনানি শেষে ১১ দিনের বিচারবিভাগীয় জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত বিচারক সৌভিক ঘোষ। সেক্ষেত্রে আগামী ৭ জুন ফের অভিযুক্ত সকলকে আদালতে তোলা হবে। 

তবে তদন্তের স্বার্থে কারাগারে গিয়েই ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফর্সমেন্ট দিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন, সেইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের ওই বয়ানও রেকর্ড করা হবে।
 
এদিন দুপুর ১.২০ মিনিট নাগাদ ইডির আঞ্চলিক কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কম্প্লেক্স থেকে বেরিয়ে কলকাতা নগর দায়রা আদালতের দিকে রওনা হয় পিকে হালদারের ভাই ও তার চার সহযোগী- প্রানেশ কুমার হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র এবং ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদারকে। তবে আদালতে যাওয়ার পথে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি কেউই।
 
যদিও সাংবাদিকদের নজর এড়িয়েই এদিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় মূল অভিযুক্ত পিকে হালদারকে। অন্যদিকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেল থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় নারী অভিযুক্ত শর্মী হালদারকে। 

এদিন পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ অভিযুক্তকে এজলাসের একদিকে রাখা হয়। সেখানে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা সারতে দেখা যায় তাদের। 

অন্যদিকে নারী অভিযুক্ত শর্মীকে রাখা হয় আরেকটি প্রান্তে। শুনানি শেষে শর্মীকে যখন কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পৃথকভাবে আদালত থেকে বাইরে বের করা হয় তখন সাংবাদিকরা শত চেষ্টা সত্ত্বেও তার মুখ থেকে একটি কথা বের করতে পারেনি।
 
বিকাল ৫টা ১০ নাগাদ যখন আদালত থেকে পি কে হালদারসহ পাঁচ অভিযুক্তকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও তাদের কেউই একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেননি।
 
গত ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ইডি। এরপর প্রথম দফায় ৩ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের ইডি রিমান্ডের নির্দেশ দেন আদালত।

গত কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। জানা গেছে, শুধু অশোকনগর বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা গোটা ভারতে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিলেন। তাদের জেরা করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিরও হদিস পাওয়া গেছে। যদিও সেই আয়ের উৎস পি কে হালদার বা তার সহযোগীরা কেউই দেখাতে পারেননি। কলকাতা ও এর উপকণ্ঠে এমন ১৩ টি সংস্থার খোঁজ মিলেছে যেগুলো পিকে হালদার বা তার সহযোগীদের হতে গড়া। 

এদিন এসব প্রশ্নের উত্তরে ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, আমরা পি কে হালদারকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন কিছু তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে যাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা গোটা ভারতে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিলেন। তাদের  জেরা করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু সেই আয়ের উৎস পি কে হালদার বা তার সহযোগীরা দেখাতে পারেননি।
 
পিকে হারদারকে জেরা করে প্রায় ১৩টি বাড়ি, ফ্ল্যাট, বোট হাউস ও অসংখ্য জমির হদিস পাওয়া গেছে। সেগুলো কোনোটা পি কে হালদার ও সহযোগীদের নামে কোনোটা আবার বেনামে।
  
আইনজীবী বলেন, ‌‌‘বাংলাদেশ থেকে আসা অর্থ মূলত রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা হয়েছে। কলকাতা ও এর উপকণ্ঠে এমন ১৩টি সংস্থার খোঁজ মিলেছে, যেগুলো পি কে হালদার বা তার সহযোগীদের হতে গড়া।’

বাংলাদেশ থেকে আত্মসাৎ করা টাকা বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ইডির আইনজীবী বলেন, ‘এটি দুই দেশের ব্যাপার। সবরকম আইনি জটিলতাকে সরিয়ে রেখে যেভাবে তারা এগোবে এবং বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি- সব কিছুর ওপর ভিত্তি করে তাকে হস্তান্তর করা হতে পারে। যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। 

পি কে হালদার তদন্তে সম্পূর্ণ সহায়তা না করলেও যতটুকু করছেন তা দিয়ে তদন্তের কাজ এগোচ্ছে বলেও এদিন জানান অরিজিৎ চক্রবর্তী। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর