বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাভারে শেষ হয়নি ৫০ ভাগ কাজও

সাভার প্রতিনিধি

সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের পরও হাজারীবাগের একটি ট্যানারিও গতকাল পর্যন্ত হেমায়েতপুর চামড়া শিল্প নগরে স্থানান্তর করা হয়নি। এক বছরে দশবারেরও বেশি হুঁশিয়ারের পরও ধীরগতিতে চলছে ট্যানারিগুলোর অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। কয়েকটি কারখানার ৫০ ভাগ কাজে শেষ হলেও অধিকাংশ কারখানার অবকাঠামোর কাজ শুরুই করা হয়নি। এদিকে, চামড়া শিল্প নগরীর জন্য  তৈরি বর্জ্য পরিশোধনাগারের কাজও শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ৩১ জানুয়ারি থেকে সিইটিপির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্প নগরী হস্তান্তর করার জন্য ১২১ জন শিল্প মালিককে  ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৮টি প্লটের মালিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেননি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিল্পমন্ত্রী ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। এরপরও কাজ শুরু না হলে তাদের প্লট বাতিল করা হবে।

সূত্র জানায়, হেমায়েতপুরের হরিণধারায় চামড়া শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য পরিশোধনের জন্য তিনটি ভাগে বিভক্ত করে ইটিপি প্লান্ট নির্মাণ শুরু হয়। এর মধ্যে সেন্ট্রাল ইটিপিকে (সিইটিপি) ইপিএস ৩, ইপিএস ২ ও ইপিএস ১ নামকরণ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) নির্মাণ কাজ করছে চীনের লিং জি এনভায়রনমেন্ট। তারা ২০১৪ সালের মার্চ থেকে কাজ শুরু করে কেবল বেইজমেন্টের কাজ করেছে। সেন্ট্রাল ইটিপির কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাদের নিয়োজিত বাংলাদেশি জাকির এন্টারপ্রাইজের কর্মরত মুরাদ মণ্ডল, আলী হোসেন, মোবারকসহ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, তারা মোট ৬০ জন শ্রমিক দেড় বছর ধরে এ প্লান্টে কাজ করছেন। তবে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, চামড়া শিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেই তারা কারখানা হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসবেন। এ ছাড়াও পুরো ট্যানারি এলাকায় সিইটিপেতে বর্জ্য পৌঁছানোর জন্য সড়কের নিচে পাইপ বসানোর কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। এ কাজ শেষ করতে আরও তিন মাস সময় লাগবে বলে জানান সিরাজ নামের এক ঠিকাদার। অন্যদিকে ট্যানারি শিল্প এলাকার বংশী নদীর পাশ দিয়ে সীমানাপ্রাচীর দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা শেষ করা হয়নি। এ প্রকল্পে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন বসানো হলেও গ্যাস সংযোগের পাইপ বসানো হয়নি। বিভিন্ন কারখানায় পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য তৈরি পানির পাম্পটিও অবহেলায় যন্ত্রাংশগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়া অধিকাংশ মালিক তাদের প্লটের সীমানাপ্রাচীর  তৈরি করে রেখেছে। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি অনেকেই। আবার ২০৫টি প্লটের মধে প্রায় ৩০টি ভবনের একতলা, দোতলা ও ৩ তলার ছাদ নির্মাণ করা হলেও তা চলছে ধীরগতিতে। অ্যাপক্স তাজিন লেদার করপোরেশন ও মেসার্স মুন ট্যানারির গ্রাউন্ড ফ্লোরের পিলার মাত্র উঠছে। জহির ট্রেডিংয়ের তৃতীয় তলার ছাদ  তৈরি শেষ হয়েছে। কুমিল্লা ট্যানারি, মেসার্স ব্রাদার্স ট্যানারিসহ বেশ কিছু কারখানার বাইরে নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা নিউ কাজল ট্যানারি, সালমা ট্যানারি, এ কে লেদারসহ কয়েকটি কারখানার। ঢাকা হাইড স্কিনের বেইজমেন্টের কাজ প্রায় শেষ। তবে এ কারখানাগুলোয় নিয়োজিত কর্মীরা জানেন না কাজ কবে শেষ হবে বা মেশিনপত্র কবে আনা হবে। এ ছাড়া  ডেল্টা লেদার, সিটি লেদার, ইউসুফ লেদার, ইসমাইল  লেদার ও রুবি ট্যানারিসহ কয়েকটি প্লটের স্থাপনা তৈরি করার জন্য মাটি কেটে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ুম বলেন, ইটিপিগুলোর মধ্যে ইপিএস-২ এর কাজ প্রায় শেষ। আর সেন্ট্রাল ইটিপির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তেঁতুলঝোরা ইউনিয়ন শিল্পনগরীতে অধিকাংশ ট্যানারি মালিক কাজই শুরু করেনি। এ ছাড়া শিল্পনগরী এলাকায় এখনো সার্ভিস রাস্তা, বিদ্যুৎ লাইন ও গ্যাসের লাইন করা হয়নি। তবে বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহম্মেদ শাহীন জানান, হাজারীবাগে ট্যানারি শিল্প থাকলে এ ব্যবসা চলবে না। যত দ্রুত সম্ভব স্থানান্তর হলে আমাদের জন্য ভালো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর