বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর টোল মওকুফ নিয়ে টালবাহানা চলছে। প্রস্তাবের চার মাস পরও সেতু বিভাগ সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি প্রস্তাবিত টোল মওকুফ হবে কিনা। অনানুষ্ঠানিক একটি বৈঠক করে তারা এ বিষয়টি চাপিয়ে দিয়েছে অর্থ বিভাগের ওপর। এখন বলছে, অর্থ বিভাগের মতামত পেলে টোল মওকুফ হতে পারে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাসেম ভূইঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর টোল মওকুফ করা হয়েছে। প্রথম সেতুর টোল মওকুফের ব্যাপারে আমরা অর্থ বিভাগের মতামত চেয়েছি। যতটুকু জানি এ বিষয়ে তারা এখনো আমাদের কোনো মতামত দেয়নি।’ গত বছরের জুলাই থেকে হঠাৎ করেই সেতুতে নতুন হারে টোল আদায় শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেতুতে চলাচলকারী বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব যানবাহনের চালক, শ্রমিক এবং মালিকরা এর প্রতিবাদ করেন। পরে আগস্টের শুরু থেকে অবরোধ ডেকে সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন চালক-শ্রমিক-মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু টোলমুক্ত সংগ্রাম পরিষদ। অবরোধের চার দিনের মাথায় ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে সংগ্রাম পরিষদ। পরে ১০ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং সড়ক পরিবহন সমিতি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক-ব্যবসায়ী-নাগরিক ঐক্য পরিষদ এবং ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের নেতারা। অনানুষ্ঠানিক ওই বৈঠকে বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুর টোল মওকুফের প্রস্তাব করা হয়। ওই বৈঠকের সূত্র ধরেই ১৬ আগস্ট টোল মওকুফের প্রস্তাবের বিপরীতে অর্থ বিভাগের মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়— রাজধানীর যানজট নিরসন ও জনসাধারণের সহজ যাতায়াতের সুবিধার্থে ঢাকা মহানগরীর কেন্দ্রস্থল থেকে আশপাশের সেতুগুলোয় কোনো প্রকার টোল আদায় করা হয় না। একই কারণে বুড়িগঙ্গা সেতু-১ থেকেও কোনো টোল আদায় করা যুক্তিযুক্ত নয় বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মনে করে। এ ছাড়া ‘টোল নীতিমালা-২০১৪’ অনুযায়ী বুড়িগঙ্গা সেতু-১-এর টোলের হার বৃদ্ধি কার্যকরও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়। এদিকে গত আগস্টে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি সেতু বিভাগ। অর্থ বিভাগের মতামতের জন্য তারা অপেক্ষা করে আছে এখনো। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগস্টের চিঠির জবাব না পেয়ে ৩০ ডিসেম্বর অর্থ বিভাগে টোল মওকুফের ব্যাপারে মতামত দিতে আবারও তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক জলীল বলেন, আগস্টের ঘটনার পর থেকে বুড়িগঙ্গা সেতুতে নতুন হারে টোল আদায় হচ্ছে না। এ বিষয়টি এখন স্থিতাবস্থায় রয়েছে। অর্থ বিভাগের মতামত পেলে টোল মওকুফের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।