সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রবল স্রোতেও থেমে নেই পদ্মা সেতুর কাজ

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

প্রবল স্রোতেও থেমে নেই পদ্মা সেতুর কাজ

ভরা বর্ষায় প্রমত্তা পদ্মায় বইছে প্রবল স্রোত। এ স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়েই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কাজ। এখন সেতু দৃশ্যমানের পালা। তাই প্রবল স্রোত উপেক্ষা করেই পদ্মায় স্থাপন হচ্ছে বিশাল বিশাল পাইল। নদীর ওপর পাইল স্থাপনের পাশাপাশি নদীতে সংযোগ সেতুর ভায়াডাক্ট পাইলের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সেতুর ২২ নম্বর পিলারের একটি পাইল স্থাপন চূড়ান্ত প্রায়। এ ছাড়া নদীশাসনসহ অন্যান্য প্যাকেজেও কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এদিকে পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারবাহী মোট ৫টি জাহাজ মাওয়ায় পৌঁছার পর প্রকল্পটির নির্মাণযজ্ঞে উৎসবের আমেজ বইছে। একের পর এক জাহাজবোঝাই সুপার স্ট্রাকচারের দৃশ্য দেখে বিস্মিত নির্মাণ কর্মীরা। নাটবল্টু দ্বারা টাইট করে লাগানো এই সুপার স্ট্রাকচারের ওপর ভর করেই স্থাপন হবে বিশাল এই সেতু। সুপার স্ট্রাকচারবাহী ৫টি বার্জের খালাস হয়েছে মাওয়ায়। চীনা বার্জ মাওয়ার কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের জেটিতে নোঙর করা হয়। জেটির ক্রেনে করে বার্জ থেকে এগুলো নামিয়ে আনা হয়। এই অবকাঠামোর মধ্যে জয়েন্ট, সেকশন, ডয়াগনাল মেম্বার, গার্ডার, টপকর্ড ও বটমকর্ড উল্লেখযোগ্য। পদ্মা সেতুর উপরি কাঠামো বা সুপার স্ট্রাকচার ফিটিংয়ের কাজ চলছে এখন মাওয়া ট্রাস ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে বিশেষজ্ঞ টিমের অপর বিদেশি সদস্য কানাডার অস্টেন ফিল্ট ও  নেদারল্যান্ডস কারবাজাল পরিদর্শনে আসছেন। এ খবরে নতুন গতি পেয়ে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিরন্তর কাজ করছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মাওয়ার কুমারভোগে নির্মিত বিশাল ওয়ার্কশপে ট্রাস হাউসে স্প্যানগুলোকে একত্রিকরণের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জোড়ানো এসব স্প্যান যথাযথভাবে প্রস্তুত করে আগামী ডিসেম্বরে তা স্থাপন কাজ শুরু হবে। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজসহ সেতুটির টোল আদায়ের জন্য বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক টোল প্লাজার কাজ। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের খানবাড়ি এলাকায় পদ্মা সেতুর নান্দনিক শৈল্পে নির্মিত এ টোল প্লাজা এখন দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সবার। টোল প্লাজা ও সেতুর অন্যতম প্রধান এই অংশটি সেতুস্থলে পৌঁছানোর খবরে স্থানীয় জনগণসহ দেশের দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষের মাঝে আশার আলো ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতুকে ঘিরে সড়ক নেটওয়ার্কে শুরু হয়েছে রেল সংযোগ, ফোর লেন সড়কের কাজ। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রথম ফোর লেন এক্সপ্রেস ওয়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফোর লেন সড়কের পাশাপাশি শুরু হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল-যশোর রেল সংযোগের কাজ। ফোর লেনের কাজ সোয়া ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যে পরিমাণ লোড পড়বে তার জন্য সড়কের প্রয়োজন হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই উন্নতমানের এই সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে এবং পদ্মা সেতুর রেল সংযোগের কাজ শুরু হচ্ছে ডিসেম্বরে। ঢাকা-গেন্ডারিয়া সেকশনে তিন কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭২ কিলোমিটার নতুন মূল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথের এ মাসের প্রথম দিকে রাজধানীর রেল ভবনে রেল কর্তৃৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সই হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মূল পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিন থেকেই এই রেলপথের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ চালু করার মহাপরিকল্পনা রয়েছে। তিনটি অংশের নির্মাণ কাজ সাড়ে চার বছরে শেষ হবে। প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে বিদ্যমান ঢাকা রেলস্টেশন (কমলাপুর) থেকে শুরু হয়ে গেন্ডারিয়া-মাওয়া-পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা স্টেশনকে যোগ করবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাঙ্গা জংশন থেকে বিদ্যমান কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া জংশন হয়ে নড়াইলের পদ্মবিলা জংশন হয়ে যশোরের রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া স্টেশনকে সংযুক্ত করবে। সুপার স্ট্রাকচার একত্রিকরণসহ দ্রুত সেতু বাস্তবায়নে কাজ এগিয়ে চলার খবরে পদ্মাপাড়ের মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ বইছে। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২৩টি জেলার তথা সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। উন্মোচিত হবে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত।

সর্বশেষ খবর