শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের কাজ শুরু জানুয়ারিতে

নিরাপত্তা রক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ চলছে রাশিয়া ও ভারতে

আহমদ সেলিম রেজা

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের মূল কর্মযজ্ঞ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাসে। পাঁচ বছর আগে ২০১০ সালে প্রথম রাশিয়ার সঙ্গে এমওইউ এবং ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এ বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের কাগুজে অভিযাত্রা। এরপর কেন্দ্রের নকশা ও নিরাপত্তা বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ৪৭ জন বাংলাদেশিকে পাঠানো হয় রাশিয়ায়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। একই সঙ্গে বিদ্যুেকন্দ্রের নিরাপদ পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণে কারিগরি সেবার জন্য রাশিয়ার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে ‘সার্ভিস কনট্রাক্ট’ চুক্তি করছে বাংলাদেশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কাজে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ৫৫ জন কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে ভারতে ‘ফাউন্ডেশন কোর্স অন নিউক্লিয়ার এনার্জি’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ আরও ৩০-৩৫ জন কর্মকর্তা ভারত যাবেন এ প্রশিক্ষণের জন্য।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনায় মোট জনবল লাগবে দুই হাজার ৫৩৫ জন। এই জনবলের মধ্যে এক হাজার ৪২৪ জনকে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাকিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ভারত ও বাংলাদেশের প্রশিক্ষকের মাধ্যমে। চলতি বছর থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এরই মধ্যে রূপপুর প্রথম    পর্যায় প্রকল্পে ৮২ জন এবং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে বাকি নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। প্রশিক্ষিত এসব জনবলের বেতন-ভাতা হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্র থেকে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, তার প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে মাত্র সাড়ে তিন টাকা। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসেবে দেবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ মে প্রথম রাশিয়ার সঙ্গে এমওইউ এবং ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে শুরু হয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ স্বপ্নের অভিযাত্রা। এরপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া থেকে আসা ১৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও পারমাণবিক শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাইট স্পেসেফিক স্টাডি রিপোর্ট নিয়ে পর্যালোচনা করেন। এসময় প্রকল্প এলাকায় রাশিয়ার পরমাণু বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করা এক বাংলাদেশি প্রকৌশলী জানান, আমার অবাক লেগেছে যখন দেখলাম তারা আশপাশের গাছের পাতা, ছাল এবং মাটি, পানি, বালু ও নুড়ি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, আসলে পরমাণু কেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ ও প্রতিবেশের সক্ষমতা জানাটা জরুরি। পরে এই প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ করে রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর প্রকল্প তৈরি করতে লেগে যায় এক বছর। ২০১৩ সালে প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা এবং একই বছরের ২৩ এপ্রিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদিত হয় একনেকে। সে আলোকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায় বা মূল প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি সই করে সরকার। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কাল সাত বছর। যথাসময়ে এ বিদ্যুেকন্দ্রটির নির্মাণ শেষ হলে প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০২৪ সালের অক্টোবরে। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী বিদ্যুেকন্দ্রটি পরবর্তী ৬০ বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকার জাতীয় সংসদে পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন সংক্রান্ত একটি বিল পাস করে। সে আলোকে এখন চলছে পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার জন্য একটি কোম্পানি গঠনের কাজ। জানুয়ারির আগেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা যাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন।

সর্বশেষ খবর