বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্বের নজর বাংলাদেশি ডেনিমে

রুহুল আমিন রাসেল

বিশ্বের নজর বাংলাদেশি ডেনিমে

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকপণ্য ডেনিম বা জিন্স নজর কেড়েছে বিশ্বের। সীমাহীন সম্ভাবনার হাতছানিতে থাকা বাংলাদেশি ডেনিম পণ্য দেখতে ঢাকা সফরে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানিসহ বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলো। বিদেশিদের আগ্রহ— বিশ্ববাজারে ডেনিম রপ্তানিতে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গতকাল শুরু হওয়া ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো-২০১৬’ ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদেশিদের।

গতকাল সকালে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা—আইসিসিবিতে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এবারের ডেনিম এক্সপোর পঞ্চম সংস্করণ শেষ হবে আজ সন্ধ্যায়। বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপার্ট আয়োজিত ‘প্রাকৃতিক ডেনিম’ শীর্ষক এ এক্সপোয় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪টি দেশের ৫৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এবারের এক্সপোয় প্রায় ৫ হাজার আমন্ত্রিত ডেনিম বিশেষজ্ঞ ও দর্শনার্থী অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। গতকাল সরেজমিনে আইসিসিবির ৪ নম্বর হলে গিয়ে দেখা যায়, এবারের পুরো এক্সপো-প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে গ্রামীণ আবহে। এতে বাংলাদেশের গ্রামীণ আবহ, ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি স্টল তৈরি হয়েছে বাঁশ দিয়ে। বেত ও কাঠের বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবহারও ছিল দৃষ্টি কাড়ার মতো। কারণ, এবারের এক্সপোর থিমও ‘প্রাকৃতিক ডেনিম’। এমন থিম প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর উদ্যোক্তা এবং ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রকৃতি ও ফ্যাশন একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। প্রাকৃতিক সব জিনিসের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গভীর। সবকিছু মিলিয়েই দেশের ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি।’ তিনি বলেন, এই এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারের ডেনিম এক্সপোতেও দিনভর পোশাকশিল্প-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক নিয়ে আয়োজন করা হয় একাধিক সেমিনার। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি—বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. টমাস প্রিনৎস বলেন, ইউরোপের বাজার বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ক্ষেত্র। তা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখতে পোশাকশিল্পের নিরাপত্তা প্রয়োজন। এটা করতে পারলে ২০২১ সালের আগেই ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন সম্ভব। ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই জোহান ফ্রাইসেল বলেন, পোশাক খাতে বাংলাদেশ দিনে দিনে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। তিনি মনে করেন, পোশাকপণ্যের অধিকাংশ ক্রেতা তার পণ্যের স্থায়িত্ব ও সঠিক মান সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে চান। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নও সম্ভব। পিভিএইচের কান্ট্রি ম্যানেজার নাজিব সাইদ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রচুর কাঁচামাল আছে। কিন্তু সঠিক ব্যবহার নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনে ক্রেতাদের কাছে পণ্যের মান নিশ্চিত করতে হবে।’ ডেনিম এক্সপোয় অংশগ্রহণকারীরা আলাপকালে বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন সম্ভাবনা জাগিয়েছে ডেনিম পোশাকপণ্য। ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন, বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহও বাড়ছে। মোদ্দা কথা, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আরও এক ধাপ এগিয়ে নিচ্ছে ডেনিম। যদিও বাংলাদেশে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডেনিম কাপড় এখনো উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, চীন থেকে একটা বড় অংশের ডেনিম পোশাক তৈরির কাপড় আমদানি করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।

ডেনিমঅ্যান্ডজিন্স ডটকমের তথ্যমতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ডেনিম পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয়। ২০১৫ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬ কোটি মার্কিন ডলারের ৭ কোটি ৪৩ লাখ পিস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৭৭ কোটি ডলারের ১৪ কোটি পিস ডেনিম পণ্য (জিন্সের প্যান্ট, শার্ট, জ্যাকেট, ব্লেজার ইত্যাদি) রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩০টি ডেনিম পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আছে।

বাংলাদেশে ডেনিমের বাজার সম্পর্কিত কয়েকটি সমীক্ষার তথ্যমতে, ১৯৮৯ সালে প্রথম হংকং ও ফিলিপাইনের দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে ডেনিম পোশাক তৈরির দুটি কারখানা স্থাপন করে। ১৯৯২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১তম ডেনিম সরবরাহকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

জানা গেছে, বর্তমান বিশ্বে ডেনিমের বাজার কমবেশি ৫৬ বিলিয়ন ডলারের। ২০২১ সাল নাগাদ এটি ৬৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। গড়ে কম মূল্যের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করে বলেই বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জোগান দেওয়া হয় ৩৫০ কোটি ডলারের ডেনিম পণ্য। বিশ্বে বাংলাদেশের ডেনিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সে হারে উৎপাদন হচ্ছে না বলে এ খাতে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে ডেনিম পোশাক উৎপাদনে উদ্যোক্তারা এখন বিনিয়োগ করছেন। আগামী পাঁচ বছরের এ খাতে ৭০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় সম্ভব। এই অফুরন্ত সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কম সুদে ঋণ, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।

সর্বশেষ খবর