সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অবশেষে দ্বন্দ্বের নিরসন

এক কাতারে কওমিরা সম্মত এক বোর্ডে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দ্বন্দ্ব ভুলে এক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একীভূত হয়ে সরকারি স্বীকৃতি নিতে একমত হয়েছে দেশের শীর্ষ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং আলেমরা। গতকাল দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ কওমি নেতারা। এ বৈঠকে সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে এবং স্বীকৃতি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বেফাকুল মাদারিসিল অ্যারাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) সভাপতি আল্লামা আহমদ শফী এবং বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়।

বেফাক  নেতা মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, গতকালের বৈঠকে সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসেন দেশের শীর্ষ আলেম এবং বিভিন্ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা। ওই বৈঠকে এক বোর্ডের অধীনে স্বীকৃতি নিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং বৈঠকে করণীয় নির্ধারণ করতে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়। জানা যায়, কওমি মাদ্রাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি দিতে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে ৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণার পর প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ নেতারা। ওই দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৭ অক্টোবর ঢাকায় বেফাক আয়োজিত জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে এ দুই নেতার দ্বন্দ্বে প্রকাশ্যে রূপ নেয়। ওই সম্মেলনে দুই নেতার অনুসারীরা একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। দ্বন্দ্ব নিরস করে এক বোর্ডের অধীনে সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে উদ্যোগ নেন আহমদ শফী। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে শনিবার জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়। বৈঠকে সম্মিলিতভাবে এমন একটা নীতিমালা তৈরি করে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো শর্ত ছাড়া স্বকীয়তা বজায় রেখে সরকারি স্বীকৃতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার আদলে সরকারি স্বীকৃতি নিতে রাজি হন কওমি নেতারা। ওই বৈঠকে করণীয় নির্ধারণ করতে আল্লামা আহমদ শফীকে প্রধান করে ২২ সদস্যের ‘কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান বাস্তবায়ন কামিটি’ গঠন করা হয়। সরকারের সঙ্গে স্বীকৃতি বিষয়ে আলোচনা করতে বেফাক মহাসচিব আবদুল কুদ্দুসকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশে সাড়ে ১২ হাজার পুরুষ এবং দেড় হাজার মহিলা কওমি মাদ্রাসাসহ মোট ১৪ হাজারের অধিক কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। যাতে লেখাপড়া করছেন প্রায় ১১ লাখ শিক্ষার্থী। মাদ্রাসাসমূহে কর্মরত রয়েছে ৭৪ হাজারের অধিক শিক্ষক। দেশের এসব কওমি মাদ্রাসা পরিচালিত হয় ছোট-বড় কমপক্ষে ২৫টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। এসব কওমি শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম হলো বেফাকুল মাদারিসিল অ্যারাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক), আঞ্জুমানে ইত্তিহাদিল মাদারিস, তানজিমুল মাদারিস, এদারায়ে তালিমিয়া দীনি বোর্ড, আজাদ দীনি এদারায়ে তালিম সিলেট, মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশ, কুমিল্লা তানযীমুল মাদারিস, দক্ষিণ ঢাকা এদারা, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা পরিষদ, কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদ, দীনি শিক্ষা বোর্ড, বেফাকুল মাদারিস কওমিয়া, ইলহাকুল মাদারিস। কওমি মাদ্রাসাগুলোর আলাদা বোর্ড থাকলেও তা সরকার স্বীকৃত না হওয়ায় ‘ফারেক’ বা ডিগ্রিধারী হয়েও কেউ সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদনের সুযোগ পান না। বঞ্চিত হন সরকারি, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও। সরকারের নেওয়া উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে কওমি মাদ্রাসা থেকে ‘ফারেক’ হওয়া শিক্ষার্থীরাও বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের ডিগ্রিধারীদের মতো সরকারি চাকরির আবেদনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবে। স্বীকৃতি মিললে পাল্টে যাবে কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর