শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সংকট দুই ছাত্র সংগঠনে

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, কোথাও নেই ছাত্রদল

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশের বড় দুই ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগ ৪ জানুয়ারি পা দিচ্ছে ৬৯ বছরে। অন্যদিকে ১ জানুয়ারি ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে ছাত্রদল। দুই সংগঠনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন— মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

মাহমুদ আজহার

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা রাজপথ—কোথাও নেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রায় সব অফিসই তালাবদ্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিন কিংবা টিএসসি আজ অচেনা ছাত্রদলের। খোদ নয়াপল্টনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও অধিকাংশ সময় থাকে তালাবদ্ধ। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কেউ উত্তরায় কিংবা কেউ ধানমন্ডিতে নিজেদের মতো করে সাব অফিস খুলে বসেছেন। বর্তমান কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। এমনই এক পরিস্থিতিতে আগামীকাল ১ জানুয়ারি সংগঠনটির ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গত ১৫ অক্টোবর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের প্রথম আহ্বায়ক বর্তমান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছাত্রদল গঠন করার সময় একটি কথাই আমাকে বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। এক মাসের টাইম ফ্রেম বেঁধে দিয়েছিলেন। সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ছাত্রদের দিয়েই আমরা কমিটি করেছিলাম। আজ মনে হচ্ছে এগুলো সোনালি অতীত।’ তিনি বলেন, ছাত্রদলকে আজ ঘুরে দাঁড়াতে হলে জিয়ার আদর্শকে লালন করতে হবে। নিয়মিত ছাত্রদের দ্বারা কমিটি করতে হবে। গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। জানা যায়, ছাত্রদলের কমিটি করতে কয়েক মাস আগেই দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলেন। এ কারণে বর্তমান শীর্ষ তিন নেতাকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যও করা হয়। কিন্তু যুবদলের কমিটি হচ্ছে হবে করতে করতে বেশ কয়েক মাস পার হয়ে গেছে। কার্যত যুবদলের কারণেই আটকে আছে ছাত্রদল। বিএনপি সূত্র জানায়, জানুয়ারিতে যুবদলের কমিটির পরপরই ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে হাত দেবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে কমিটি সিনিয়র দিয়ে হবে না জুনিয়র দিয়ে হবে তা নিয়েও বিএনপিতে নানা মত রয়েছে। এক পক্ষ চাচ্ছে, বাস্তবতার কারণে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিছুটা সিনিয়র করে বাকি পদগুলো জুনিয়র হলেও সমস্যা নেই। আরেক পক্ষ বলছে, বিএনপির আন্দোলনে ছাত্রদলের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই। তাই জুনিয়রদের মাধ্যমে কমিটি হলেও কোনো সমস্যা নেই। বলা যাবে, ছাত্রদল নিয়মিত ছাত্রদের হাতে যাচ্ছে। ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর থেকে বর্তমান ছাত্রদল এখন পর্যন্ত কোনো সাধারণ সভা করতে পারেনি। জেলা মহানগর কিংবা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক নেতৃত্বের সঙ্গে কেন্দ্রের তেমন কোনো যোগাযোগও নেই। বলা চলে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। ছাত্রদলের এই কমিটি গঠনের পর নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন, তারা যে কোনো পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। নিয়মিত অবস্থান করবেন। একই সঙ্গে অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দেখা যাবে ছাত্রদলকে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছিল শুধু কথামালায়। বাস্তবে তাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যায়নি। ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে স্বীকার করেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ক্যাম্পাসভিত্তিক পদচারণা সেভাবে হয়নি। মোটাদাগে এটা ব্যর্থতা। তবে ১১ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি দিয়েছি। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদলের উপস্থিতিই ছিল বেশি।’ সূত্রমতে, ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো ইস্যুতেও দেখা যায়নি ছাত্রদলকে। ঢাকা বা বাইরে কোনো ছাত্র সমাবেশও করতে পারেনি। দিবসভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি দেখা গেছে প্রেস রিলিজ নির্ভর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নির্ভর প্রচারণাও দেখা যায় ছাত্রদল নেতাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদল সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছি। সর্বশেষ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় র‍্যালিও টিএসসি পর্যন্ত গিয়েছি। পুলিশের মারমুখি অবস্থানের কারণে ক্যাম্পাসে যেতে সমস্যা হয়। ছাত্রলীগকে ফেস করা আমাদের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীকে দেখা মাত্রই গ্রেফতার করে। অনেক সময় গুলিও চালায়। এটাই বড় সমস্যা।’ ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা বলেন, ছাত্রদলের কমিটি এখন প্রেস রিলিজ নির্ভর। আগে হতো ক্যাম্পাসে। কেন্দ্র থেকে কমিটি না দিয়ে অন্তত জেলা-উপজেলায় গিয়ে কমিটি করা উচিত। একই সঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ তৃণমূলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের একটি ডাটাবেজ থাকতে হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সবাইকে এক নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা জরুরি। নতুন কমিটি কবে হবে তার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না হলেও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে যেতে ঢাকা-লন্ডন সমানতালে যোগাযোগ রাখছেন প্রত্যাশীরা। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ও সিনিয়র সহসভাপতি মামুনূর রশীদ মামুন সংগঠনের শীর্ষ পদে থাকতে আগ্রহী। সিনিয়রদের মধ্য থেকে হলে তাদের দুজনের একজনকে সভাপতি করাও হতে পারে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। শীর্ষ পদপ্রত্যাশী অন্য ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—এজমল হোসেন পাইলট, নাজমুল হাসান, আলমগীর হোসেন সোহান, আসাদুজ্জামান আসাদ, মফিজুর রহমান আশিক, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, বায়েজিদ আরেফিন, আবদুর রহিম হাওলাদার সেতু, গোলাম মোস্তফা, মিয়া রাসেল, মিজানুর রহমান সোহাগ, ইখতিয়ার কবির, মামুন বিল্লাহ, মিনহাজুল ইসলাম, সৈয়ম মাহমুদ প্রমুখ। ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বিগত ওয়ান ইলেভেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে টানা ৭ দিন নির্যাতিত হয়েছি। এ ছাড়াও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই সম্পৃক্ত থেকেছি। ত্যাগের মূল্যায়ন করলে উপযুক্ত পদে আমি আশাবাদী।’

 

সর্বশেষ খবর