মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভেজাল প্রসাধনীতে রাসায়নিক বিষ

রাসায়নিক পরীক্ষায় ক্ষতিকর পদার্থ, চরম হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

রুহুল আমিন রাসেল

ভেজাল প্রসাধনীতে রাসায়নিক বিষ

বিদেশি নকল ও ভেজাল প্রসাধনীতে মিথানল-হাইড্রোকার্বন নামের জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক বিষ পাওয়া গেছে। রাজধানীতে বিদেশি নামি-দামি ব্র্যান্ডের নকল ও ভেজাল প্রসাধনী শুল্ক গোয়েন্দা আটকের পর র‌্যাবের ফরেনসিক ল্যাবে ৪৮টি নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষায় ক্ষতিকর এই বিষের সন্ধান মিলেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য চরম হুমকিতে পড়েছে বলে দাবি র‌্যাব ও শুল্ক গোয়েন্দার। এ প্রসঙ্গে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মিথানল বিষক্রিয়া তৈরি করে। এটি সুগন্ধিযুক্ত পণ্যে ব্যবহার করলে জনস্বার্থে সতর্ক বার্তা দিতে হয়। তবে নকল ও ভেজাল প্রসাধনী সামগ্রীতে মিথানলের ব্যবহার বৈজ্ঞানিকভাবে ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক। তথ্য মতে, সাম্প্রতিক আমাদের বাজারে যেসব কসমেটিক বা প্রসাধনী পাওয়া যাচ্ছে, তা বাইরে থেকে মনে হয় আমদানি করা বিদেশি পণ্য। এসব পণ্যে লেখাও থাকে মেড ইন ইংল্যান্ড, ইউএই, জাপান অথবা অন্যান্য উন্নত দেশের নাম। এসব পণ্যের মোড়ক দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটা আসলে লোকাল বা স্থানীয় পণ্য। আসলে পণ্যের মোড়কে যেটা থাকে সেটা স্থানীয়ভাবে রিফিল করা। এসব পণ্যের কৌটা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এমনকি প্যাকেজিংটাও বাইরে থেকে আনা হয়। এখানে শুধু ছোট্ট একটা মেশিন দিয়ে রিফিল করা হয়। এসব পণ্যে অনেক দুর্গন্ধ পাওয়া গেলেও, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। তবে খালি চোখে সূক্ষ্মভাবে দেখলে বোঝা যায় এগুলো নকল ও নিম্নমানের পণ্য। এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, মানুষের শরীর ও স্কিনের জন্য ক্ষতিকর এমন বেশকিছু পণ্যের নমুনা র‌্যাবের পরীক্ষাগারসহ আরও অন্যান্য জায়গায় প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে সম্প্রতি পাওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পণ্য নকল ও ভেজাল এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। এর মানে যে কেমিক্যালগুলো আমরা বিদেশি পণ্য হিসেবে কিনছি বা দাম দিচ্ছি, সেগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর বিষ। শুল্ক গোয়েন্দারা সাম্প্রতিক বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ও নকল কসমেটিকস জব্দ করেছে। আমাদের এই অভিযান চলমান এবং অব্যাহত থাকবে। আটক করা পণ্যগুলোর মধ্যে উন্নতমানের ব্র্যান্ডের নকল ফোগ ও কোবরাও রয়েছে।

পুলিশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ফরেনসিক উইংয়ের ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে শুল্ক গোয়েন্দার জব্দ করা ৪৮টি নকল ও ভেজাল পণ্যের  নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কিটিস জেস্ট এয়ার ফ্রেস নামের পণ্যে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ পাওয়া গেছে। এটা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়নি। প্রোফেসি নামের পারফিউমে ক্ষতিকর মিথানল পাওয়া গেছে। ইন্টারনাল লাভ, ইল পাসো, সুপার ম্যাক্স সেভ জেল, ওয়ান ম্যান শো, কোবরা ডিল্যাক্স, জোভান সেক্স এপিল ইত্যাদি নামের পারফিউম স্প্রেতে মিথানল ও হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ পাওয়া গেছে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, আটক হওয়া নকল ও ভেজাল প্রসাধনীর মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ব্যাপক আকারে অর্থপাচার হয়েছে।

সর্বশেষ খবর