সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবার মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করুন

ই-৯ সভার উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবার মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর ই-৯ ভিত্তিক দেশগুলোর উদ্যোগসমূহ এসডিজির সঙ্গে সমন্বয় করে এসডিজি-৪-এর মূল লক্ষ্য সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর হোটেল র‌্যা্ডিসন ব্লুতে তিন দিনব্যাপী ‘ই-৯ মিনিস্টারিয়াল মিটিং অন এডুকেশন-২০৩০’ শীর্ষক সভার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি-৪-এর মূল লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা ও জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসার। এসব বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষা মনে রেখে আমি আশাবাদী যে এখানে উপস্থিত শিক্ষাবিদ এবং নীতিনির্ধারকরা ‘এসডিজি-৪-এডুকেশন ২০৩০’ লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে নিজ নিজ দেশের আকাঙ্ক্ষা, অঙ্গীকার, প্রাধিকারের বিষয়গুলো আলোচনা করবেন এবং এই ৯টি দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন। তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষার বিভিন্নতা সত্ত্বেও বর্তমানে আমরা এমন একটি বিশ্বে বসবাস করছি যেখানে সবাই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহিষ্ণুতা এবং বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিতে শিক্ষা সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে।’ সমাজে সঠিক মূল্যবোধ, আকাঙ্ক্ষা এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতার ভিত গড়ে দিতেও শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ই-৯-এর জন্ম দিল্লিতে ১৯৯৩ সালে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা অধ্যুষিত ৯টি উন্নয়নশীল দেশের সাধারণ শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্যসমূহ নিয়ে এই সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। এসব দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে টেকসই উন্নয়নের জন্য নতুন বৈশ্বিক ‘এডুকেশন ২০৩০’ এজেন্ডার প্রেক্ষাপটে ই-৯ উত্তর-দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার একটি সাধারণ প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। ই-৯ ভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, চীন, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া এবং পাকিস্তান। অনুষ্ঠানে ই-৯-এর নতুন চেয়ারপারসন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে গতবারের চেয়ারপারসন পাকিস্তানের শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বালিঘ-উর-রহমান সংগঠনের উন্নয়ন রিপোর্ট উপস্থাপন করেন এবং নতুন চেয়ারপারসন নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে সংগঠনের চেয়ারপারসনশিপ হস্তান্তর করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য শিক্ষা বা ‘এডুকেশন ফর অল-ইএফএ’ কর্মসূচিকে আমি সেই প্রেক্ষাপটে দেখি যা থেকে ই-৯-এর উদ্ভব হয়েছে। আমরা এসডিজি’র যুগে প্রবেশ করেছি। শিক্ষা বিষয়ক এসডিজি-৪-এর সঙ্গে এমডিজি এবং ইএফএ-এর শিক্ষা ও অর্জনসমূহের আলোকে ই-৯-এর উদ্যোগ ও কৌশলের সমন্বয়ের জন্য এই বৈঠক অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং অর্থপূর্ণ। তিনি বলেন, আমি মনে করি, এক্ষেত্রে আমাদের এই বৈঠক একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমি আরও বিশ্বাস করি, আমাদের এই বিশ্বের জন্য একটি টেকসই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই বৈঠক প্রয়োজনীয় সুযোগ চিহ্নিত এবং কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় এই বৈঠক এসডিজি-৪ অর্জনের ক্ষেত্রে যৌথভাবে আমাদের করণীয় সম্পর্কে এক ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বিগত দেড় দশকে এমডিজি আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় পথ-প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ এমডিজির অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় পর্যায়ে জেন্ডার সমতা অর্জন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় শতভাগ ভর্তি নিশ্চিতকরণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে এবং ভর্তির হার বৃদ্ধি করতে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছে। শিশুদের শৈশবে মাতৃভাষায় শেখার অধিকারের বিষয়টি মাথায় রেখে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক বই প্রকাশ করেছে। এর ফলে ২০১৬ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষা সামাজিক অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হ্রাস এবং তাদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করে। স্বাস্থ্য এবং শিখন ফলাফলের ওপর এর একটা ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বিদ্যালয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পঠন শিক্ষাকে সহজ করবে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাবে এবং নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের খাপ খাওয়াতে সাহায্য করবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং সশস্ত্র সংঘাত আজকের বিশ্বে মানবাধিকার, শান্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। উদ্ভাবন, সমঝোতা এবং দূরদর্শী নীতির দ্বারা এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। এসব বিষয়কে সামনে রেখে আমরা আমাদের শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা উপকরণ সংস্কার করছি। শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষকতা পেশায় যোগ্য ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পেশার জন্য একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে নীতিগত উপায় উদ্ভাবন এবং বিশেষ প্রণোদনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষা আমাদের কাছে একটি জাতীয় অগ্রাধিকারের বিষয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন দেশের জন্য সর্বজনীন শিক্ষাসহ বেশকিছু বলিষ্ঠ এবং দূরদর্শী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওইসব দূরদর্শী উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমতাভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ও জীবনব্যাপী শিখনের লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।

সর্বশেষ খবর