শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রানেরমেলা প্রতিদিন

মেলা নয়, যেন উৎসব

মোস্তফা মতিহার

মেলা নয়, যেন উৎসব

ছুটির দিনে ভিড় থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। লেখক, প্রকাশক, বিক্রয়কর্মীরাও ছুটির দিনের অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকেন। তবে এমন ছুটির দিনটি ছিল লেখক, প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের কল্পনার বাইরে। অন্য ছুটির দিনগুলোতে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত ভিড় থাকে। কিন্তু গতকালকের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। এক লাইনের মাথা হাইকোর্টের মূল গেটের সামনে অন্য লাইনের মাথা শাহবাগ থানার সামনে। মানুষের মাথা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। বাঁধভাঙ্গা জনস্রোতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিকিকিনির ব্যস্ততা ও বইপ্রেমীদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন প্রতিটি স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের সকল সফলতাকে হার মানানোর পাশাপাশি এক দশকের সকল সফলতাকে ছাড়িয়ে গেছে গতকাল ১৭তম দিনের সফলতার চিত্র। হাতে হাতে বইয়ের চিত্র শুধু মেলার শোভাই বর্ধন করেনি রীতিমতো বইয়ের উৎসবে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক বলেন, বইমেলার ইতিহাসে এমন জনবিস্ফোরণ কখনো দেখিনি। শুধু পাঠকদের বিস্ফোরণই ঘটেনি প্রত্যেক পাঠক বই কিনেই মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়েছেন। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম এবারের মেলা শুরুর দিন থেকেই জমজমাট। প্রথম শুক্রবারে যে পরিমাণ পাঠকের সমাগম ছিল পরবর্তীতে তা আরও বাড়বে। আর তৃতীয় শুক্রবারে এসে তো শুধু মানুষের মাথা দেখা যাচ্ছে। আগামী দিনে এই ভিড় আরও বাড়বে। এ সময় তিনি অনন্যার স্টলে দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ দিতে দিতে যেন দম ফেলার সময়ও পাচ্ছিলেন না। এত ছিল বিকালের গল্প। সকালটা ছিল একটু ব্যতিক্রম। গতকাল বেলা ১১টায় মেলার দ্বার খোলা হয়।  বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল ৫ম শিশুপ্রহর। এ সময়টিতে বাবা মায়ের হাত ধরে বই কেনার পাশাপাশি আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে ছোট্ট সোনামণিরা।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ ও সমন্বয় উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গতকাল ২৪১টি নতুন বই মেলায় এসেছে এবং ৬৪টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো: পাঞ্জেরী থেকে প্রকাশিত ইমদাদুল হক মিলনের শিশুতোষ গ্রন্থ ‘হাতি গিয়েছিলো মানুষ দেখতে’, বিজ্ঞান একাডেমি এনেছে আলী ইমামের ‘বুক অব নলেজ পাস’, ন্যাশনাল পাবলিকেশন্স এনেছে ড. আনু মাহমুদের ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ’, কথাপ্রকাশ এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘মা মেয়ের উপাখ্যান’, আগামী এনেছে বদিউল আলম মজুমদারের ‘রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে করণীয়’, নালন্দা এনেছে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর ‘খুশবন্ত সিংয়ের জোকস’, দেশ পাবলিকেশন্স এনেছে সাংবাদিক চপল মাহমুদের প্রকৃতিবিষয়ক কাব্যগ্রন্থ ‘বার্তাবাহক’।

মূল মঞ্চ: গতকাল বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আশি’র দশকের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি কুমার চক্রবর্তী। আলোচনায় অংশ নেন ড. মাসুদুল হক এবং ড. আমিনুর রহমান সুলতান। সভাপতিত্ব করেন কবি রুবী রহমান। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের বাচিকশিল্পীরা। এ ছাড়া ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর পরিচালনায় সমবেত সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদের শিল্পীরা। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্ব। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। বিচারক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, আবু বকর সিদ্দিক এবং সাগরিকা জামালী। ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর