রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের তাণ্ডব দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

ধর্মঘটের নামে সিলেট নগরীতে অরাজকতা ও তাণ্ডব চালিয়েছে ট্রাক ও মাইক্রোবাস শ্রমিকরা। সড়ক অবরোধ করে তারা প্রায় আট ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে সব ধরনের পরিবহন যাত্রীদের। অবরোধে আটকা পড়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও। পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহার করার পরও পরিবহন শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়ি। পরিবহন শ্রমিকের নাম ব্যবহার করে শান্ত সিলেটকে অশান্ত করতে বিএনপি-জামায়াত এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। হামলার পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মাইক্রোবাস শ্রমিকদের একটি কার্যালয় ও জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু সরকারের বাসা ভাঙচুর করেছে। গত শুক্রবার রাতে মদসহ তোরণ ও শাহীন নামের দুই ট্রাক শ্রমিককে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানায় ট্রাক শ্রমিকরা। পুলিশ আটককৃতদের উপশরের গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে ট্রাক শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আটক দুজনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের প্রতিহত করে। এর প্রতিবাদে উপশহর পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে পার্শ্বের মাইক্রোবাস শ্রমিকরা যোগ দেয়। পুলিশ তাদের অবরোধ তুলে দিতে চাইলে সংঘর্ষ বাধে। এতে কয়েকজন আহত হন। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবারও সড়ক অবরোধ করে ট্রাক ও মাইক্রোবাস শ্রমিক নেতারা শনিবার সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়। তাদের এই আচমকা ধর্মঘটে গতকাল সকাল থেকে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। মধ্যরাতে ধর্মঘট ডাকায় বিষয়টি অনেকেরই জানা ছিল না। তার ওপর মাইক্রোবাস ও ট্রাক শ্রমিকরা অটোরিকশা, বাস, এমনিক রিকশা চলাচলেও বাধা প্রদান করে। ফলে সকালে প্রয়োজনীয় কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে সাধারণ মানুষ পড়ে ভোগান্তিতে। নগরীর অনেক স্থানেই অ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও বাধার সৃষ্টি করা হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বেলা ২টার দিকে নাইওরপুলে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতারা ও শ্রমিক নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখানে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে ওসমানীনগরে যাওয়ার পথে উপশহরে শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন শফিক চৌধুরী। এ সময় তার গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় শ্রমিকরা। এর প্রতিবাদে তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ শফিক চৌধুরীর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে উপশহরের মাইক্রোবাস সমিতির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই কার্যালয় থেকে পুলিশ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করে। এদিকে হামলার ঘটনার সঙ্গে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এজাজুল হক এজাজ ও জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকারের হাত রয়েছে এমন অভিযোগ তুলেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। হামলার পর এজাজের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীরা মিছিল করে এবং আবু সরকারের গোপালটিলার বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। তবে হামলার ঘটনার সঙ্গে ট্রাক শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি করেছেন জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া। তিনি বলেন, হামলার সময় তিনিসহ ট্রাক শ্রমিক নেতারা পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে ছিলেন। ধর্মঘট ডাকার কথা অস্বীকার করে দিলু মিয়া বলেন, তারা ধর্মঘটের ডাক দেননি। বাস ও মাইক্রোবাস শ্রমিকরাই শনিবার ধর্মঘট ডেকে। ধর্মঘট না ডাকলে রাস্তায় ট্রাক রেখে কেন অবরোধ করা হয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে দিলু মিয়া বলেন, তারা ধর্মঘটকে সমর্থন করেছিলেন মাত্র।

হামলার ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের বর্ণচোরারা এ হামলা চালিয়েছে। প্রশাসন তাদেরকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর যারা হামলা চালিয়েছে তারা শান্ত সিলেটকে অশান্ত করতে চাইছে। সরকারের উন্নয়ন কাজে যারা বাধাসৃষ্টি করে তারাই এ হামলা চালিয়েছে।’

সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর