শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে প্রয়োজন বেড়িবাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্র

রোহিঙ্গা নিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন জাতিসংঘ দূত

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর ঠেঙ্গার চরে বেড়িবাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া জনবসতি স্থাপন সম্ভব নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা। দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দুর্গম এই চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের পর তাদের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সরকার সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে দৃষ্টি দিলে এটা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।

হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে নদীপথে ১৫ কিলোমিটার দূরে ঠেঙ্গার চরের অবস্থান। স্থানীয় জেলেদের তথ্যানুযায়ী ১৫-২০ বছর আগে মেঘনার বুকে জেগে ওঠে এই চর। এই চরের নাম প্রথমে জাইল্লার চর (জেলের চর) এরপর কেম্বার চর (কাঁকড়ার চর) এবং সর্বশেষ ঠেঙ্গার চর হয়। প্রায় ১০ হাজার একর আয়তনের এই চরে ২০১০-১১ সালে সরকারিভাবে বনায়ন শুরু হয়। হাতিয়া, সন্দ্বীপ ও ঢালচরের জেলেরা এই চরের আশপাশে নদীতে মাছ শিকার করেন এবং চরে এসে বিশ্রাম নেন। এ ছাড়া চরের তৃণভূমিতে মহিষ দেখা যায়। তবে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় জনবসতি গড়ে ওঠেনি এই চরে। বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারে পানি প্রবেশ করে। রোহিঙ্গাদের এই চরে এনে পুনর্বাসন করার আগে বেড়িবাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশ ক্যাম্প করা দরকার বলে মনে করেন স্থানীয়রা। ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে নারাজ নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়শা ফেরদৗস। তিনি সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পুলিশ ক্যাম্প করে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ করেন।

রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে প্রতিবেদন জমা ২ সপ্তাহের মধ্যে : কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারে সফরে আসা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি তৃতীয় দিনের মতো উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ৩ ঘণ্টা মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার ৩০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর নেন। কুতুপালং বস্তিতে অবস্থান করা মিয়ানমারের নাইচ্ছা প্রু গ্রামের জামালিদা, আমিনা বেগম, হামিদা বেগমসহ ২০ জন মহিলা ও খেয়ারি প্রাং গ্রামের মোহাম্মদ করিম, আবদুস সালামসহ ১০ জন পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের আরকান রাজ্য থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গারা এখানে মোটামুটি ভালো আছে। ৩ দিন ধরে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নিয়েছি। তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উখিয়ার বালুখালী, টেকনাফের লেদা ও কুতুপালং নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের ওপর আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এ সময় জাতিসংঘের বিশেষ দূতের সঙ্গে ছিলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র যুগ্ম সচিব বাকি বিল্লাহ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা। এর আগে বিশেষ দূত সকাল ৯ টার দিকে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ শামসুজোহার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। মিয়ানমার কিয়ারী প্রাং গ্রামের নির্যাতিত রোহিঙ্গা আবদুস শুক্কুর, আবদুল আলিম, মো. গফুর জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে বলেন, মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের যুবকরা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করেছে। হত্যা করেছে অনেককেই, ধর্ষণ করেছে অগণিত নারীকে, গণগ্রেফতার, নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে, অনেক শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেলে রোহিঙ্গারা যে কোনো মুহূর্তে মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি জানতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ৪ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। তিনি এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার বালুখালী নতুন বস্তি, ২২ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে লেদা ও সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। ইয়াংহি লি গত জানুয়ারি মাসের ১০ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত মিয়ানমারে ১২ দিন সফর করেন। তিনি দুপুরে কক্সবাজার ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেন।

সর্বশেষ খবর