শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রঙবেরঙের শাপলা বিল

রাহাত খান, হারতা (উজিরপুর) থেকে ফিরে

রঙবেরঙের শাপলা বিল

উজিরপুরের সাতলা-হারতার বিলে লাল শাপলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলের ১২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই পাশে বিস্তীর্ণ জলাভূমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে শাপলা বিল। যাতে ফুটে আছে লাল, নীল ও সাদা রঙের শাপলা আর ফুল। এর সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। আসছেন বিভিন্ন স্থানের পর্যটকও। বিলের মধ্যে তারা নৌকায় ঘুরছেন, আনন্দ উপভোগ করছেন, সেলফি তুলছেন। কেউ আবার ভিডিও করে নিকটজনদের শাপলার সৌন্দর্য দেখাচ্ছেন। এই শাপলা বিলের সৌন্দর্যের গল্পে রোমাঞ্চিত বরিশালের নবাগত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানও। বরিশাল জেলার ব্র্যান্ডিংয়ে (পরিচিতি) উজিরপুরের শাপলা বিল অন্তর্ভুক্ত করে এলাকাকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, ভূ-প্রকৃতিগতভাবেই বরিশালের উজিরপুর, আগৈলঝাড়া ও বানারীপাড়া এবং পিরোজপুরের নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা বর্ষার ছয় মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। এই সময়ে জমিতে কোনো চাষাবাদ হয় না। ফলে জলাবদ্ধ জমিতে বিশেষ করে উজিরপুরের সাতলা-হারতাসহ আশপাশের বিলাঞ্চল এখন ‘শাপলার বিল’ বলে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

হারতার কালভিলা গ্রামের পল্লী চিকিত্সক মনতোষ বালা মানব জানান, বিলের জমিতে প্রকৃতিগতভাবে থাকা শাপলার কন্দ থেকে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে জন্মাতে থাকে অসংখ্য শাপলা গাছ। কিছু দিন পরই ফোটে ফুল। লাল সাদা আর নীল (স্থানীয় ভাষায় রইক্তা শাপলা, সাদা শাপলা আর নন্দী শাপলা) শাপলার রঙে রঙিন হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চল। একেকটি শাপলার আয়ুষ্কাল পাঁচ-সাত দিন। বিল শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত প্রকৃতি তার সৌন্দর্য যেন ডানা মেলে সাজিয়ে রাখে শাপলার বিলে। সবচেয়ে বেশি ফুল থাকে ভাদ্র-আশ্বিন-কার্তিক মাসে। এদিকে শীতের শুরুতে অতিথি পাখির আগমনে ওই এলাকা প্রকৃতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় বলে জানিয়েছেন উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা। এই বিলাঞ্চলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন প্রচুর প্রকৃতিপ্রেমী। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে শাপলার বিলে দেখা যায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থী। হারতার কালভিলা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মতিলাল রায় জানান, আগন্তুকরা কয়েক ঘণ্টা বিলের পানিতে নৌকায় ঘুড়ে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউ ছবি-সেলফি তোলেন, কেউ আবার ভিডিও কল দিয়ে স্বজনদের শাপলার সৌন্দর্য দেখার সুযোগ করে দেন। দল বেঁধে ক্যাম্প করে জ্যোত্স্না বিলাসও করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এমনকি নাটক-সিনেমার শুটিংও হয় শাপলার বিলে। শাপলা ঘিরে দেশ-বিদেশের মানুষের আগমন, তাদের উত্সাহ-উদ্দীপনা দেখে বিলের মানুষ আনন্দ পায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা সুখলাল হালদার। হারতার স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মিতা বাড়ৈ জানান, যেদিন স্কুল বন্ধ থাকে কিংবা অবসর পেলে তারা দল বেঁধে নৌকায় শাপলার বিলে ঘুড়ে বেড়ান। এতে তারা খুব মজা পান। তাদের দেখাদেখি অনেকেই ঘুরতে আসেন। উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল বলেন, সাতলা-হারতার শাপলার বিলকে সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা এখন সময়ের দাবি। এই এলাকার বিলের নির্দিষ্ট একটি জায়গা সরকার অধিগ্রহণ করে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। উজিরপুরের শাপলা বিলের সৌন্দর্যে রোমাঞ্চিত বরিশালের নবাগত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান আগন্তুকদের নৌকার ব্যবস্থাসহ সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া তিনি বরিশাল জেলার ব্র্যান্ডিংয়ে শাপলা বিলের পর্যটনের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার কথা জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর