শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রযুক্তিনির্ভর ফ্যাশনে বাংলাদেশ

রুহুল আমিন রাসেল

প্রযুক্তিনির্ভর ফ্যাশনে বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিপ্লবের প্রস্তুতিতে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ এখন তৈরি পোশাক কারখানায় দ্রুত অটোমেশনের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভরতায় এগিয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পোশাকশিল্পে অটোমেশন ও প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়লে বিশ্বে আরও কদর বাড়বে বাংলাদেশি পোশাক বা ফ্যাশন পণ্যের। একই সঙ্গে উদ্যোক্তারা কম অর্থ খরচ করে বেশি দামি পোশাক উৎপাদন করতে পারবেন। শ্রমিকও লাগবে কম। মূল্য সংযোজন হবে বেশি। তাতে রপ্তানি আয়ও বাড়বে। এ প্রসঙ্গে আধুনিক ও সবুজ পোশাক কারখানা র্যাংকিংয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের কর্নধার ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বে প্রযুক্তিগত নতুন নতুন পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের প্রতিযোগী চীন, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ভালো পোশাক পণ্য উৎপাদনে ও মূল্য সংযোজনের জন্য বাংলাদেশও সে পথেই হাঁটছে। দেশের উদ্যোক্তারা যে হারে সবুজ কারখানা স্থাপনের দিকে ঝুঁকছেন, তাতে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করবে বলেও মনে করেন নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি— বিকেএমইএর সাবেক এই সভাপতি। পোশাকশিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি শহিদুল আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে আমরা র্টি-শার্ট করতাম। এখন আমরা স্যুট ও জ্যাকেট করতে চাই। কম খরচে বেশি উৎপাদন করতেই পোশাকশিল্পে নিত্য নতুন প্রযুক্তি সংযোজন হচ্ছে। তবে কারখানা অটোমেশনে আধুনিক মেশিনারিজ আনতে প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি হবে। ফলে ক্রেতারা অর্ডারও বেশি দেবেন। দামি পণ্য উৎপাদন করতে পারলে মূল্য সংযোজনও বেশি হবে। পোশাকশিল্পে এখন নতুন করে যারা মেশিনারিজ আমদানি করছেন, তারা সবাই অটোমেটিক পণ্য তৈরির দিকে নজর দিচ্ছেন। এদিকে নানা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এ অবস্থান মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ, বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী দেশগুলো উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। এ অবস্থায় অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে বর্তমানের চেয়ে বেশি হারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এ জন্য পোশাক খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে বাজার ও পণ্যে বহুমুখীকরণের ওপর নজর দেওয়ার পরামর্শ ব্যবসায়ীদের। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘ট্রাবল ইন দ্য মেকিং দ্যা ফিউচার অব ম্যানুফ্যাকচারিং-লিড ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রযুক্তির প্রসার এবং বদলে যাওয়া বৈশ্বিক পরিস্থিতি উৎপাদননির্ভর দেশগুলোকে প্রভাবিত করছে। আধুনিক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা, কারখানায় রোবট ব্যবহার এবং থ্রি-ডি প্রিন্টিং পদ্ধতি নতুন বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশে অনেক নারীর কর্মসংস্থান আছে। এসব দেশে স্কুলে মেয়েদের ভর্তির হার বেড়েছে, নারীর ক্ষমতায়নও বেড়েছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে এসব খাতে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে এখনই নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানও মনে করেন, মানুষ এবং রোবটিক প্রযুক্তির সহযোগী অবস্থান তৈরি পোশাক খাতে প্রযুক্তিক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্তির একটি পাথেয় হয়ে উঠতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তিক জ্ঞানের সঙ্গে ক্রম সংযুক্তি ব্যতীত শুধু তৈরি পোশাক খাতের পক্ষে এসব খাতের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ বর্তমান ৫ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজার শেয়ারকে দ্বিগুণ করতে পারে যদি প্রযুক্তিক জ্ঞান এবং মানব সম্পদের সহাবস্থান ঘটানো সম্ভব হয়, বিশেষ করে মিড-লেভেল পর্যায়ে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সর্বশেষ ‘রেডিনেস ফর দ্যা ফিউচার অব প্রোডাকশন এসেসমেন্ট ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবে এ প্রস্তুতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো। শুধু প্রতিবেশী দেশগুলোই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। বিশ্বের ১০০টি দেশের মধ্যে উৎপাদন কাঠামোর সূচকে ৮০তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারত রয়েছে ৩০তম অবস্থানে, শ্রীলঙ্কা ৬৬তম, পাকিস্তান ৭৪তম অবস্থানে। ওই সূচকে শীর্ষে রয়েছে জাপান।

সর্বশেষ খবর