শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফুল হাতে অচেনা অতিথি

মির্জা মেহেদী তমাল

ফুল হাতে অচেনা অতিথি

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ধনাঢ্য এক ব্যবসায়ীর মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। আমন্ত্রিত অতিথিদের

পদচারণে মুখর অনুষ্ঠানস্থল। অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন সুদর্শন এক তরুণ। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে বেশ স্মার্ট। হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে প্রবেশের সময় নিরাপত্তাকর্মীদের পরিচয় দেন, তিনি ওই ব্যবসায়ীর কন্যার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এরপর জন্মদিনের নাচ-গানেও অংশ নেন। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা চলে যান যে যার মতোন। ব্যবসায়ীর পরিবার তার কন্যার গিফটের হিসাব মেলাতে গিয়ে দেখেন একটি দামি হীরার সেট নেই। কোনোভাবে হিসাব মেলাতে পারছিলেন না তারা। কে গায়েব করতে পারে গয়নার বাক্স! এরপর বিষয়টি গড়ায় থানা পুলিশ পর্যন্ত। প্রথমে পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। অতিথির তালিকা নেওয়া হয়। সবার ছবি দেখে শেষ পর্যন্ত স্মার্ট ওই যুবককে অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের কাছে একেবারেই অচেনা মনে হয়। সন্দেহের তীর তাকে ঘিরেই। অনেক অনুসন্ধানের পর বেরিয়ে এলো সেই ওই তরুণই বন্ধুবেশে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে গয়নার দামি বাক্স নিয়ে লাপাত্তা। বেশ কিছুদিন আগের এ ঘটনায় জড়িত সেই তরুণ পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় ধরা পড়েন। হীরার সেট বিক্রি করতে গিয়ে নাটকীয়ভাবে ধরা পড়ে যান হানিফ নামের সেই তরুণটি।

ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে এমন একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে। পুলিশ জানায়, শুধু জন্মদিনের অনুষ্ঠানেই নয়, অভিজাত এলাকার কমিউনিটি সেন্টার, তারকা হোটেলের বলরুমের বিভিন্ন বিয়ে-বৌভাতেও অতিথি পরিচয়ে হাজির হতেন সেই তরুণ। এসব অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণও পাঠাতে হয় না। নিজ দায়িত্বেই চলে যান অনুষ্ঠানে। হৈচৈ আর আনন্দ আড্ডায় কখনো বনে যান মেয়েপক্ষের ঘনিষ্ঠ স্বজন, কখনো হয়ে যান বরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু-স্বজন। পেট ভরে খান। সুযোগ বুঝে অনুষ্ঠানের গিফট টেবিলে থাকা দামি গয়নার বাক্স নিয়ে কেটে পড়েন। কখনো বরের হাতঘড়ি, দামি মোবাইল ফোন সেট, কনের হাতের হীরার আংটি, ব্রেসলেট আর মোবাইল ফোনটিও নিজের করে নেন এই স্বজন! পারিবারিক অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বেশে এই যুবক একজন প্রতারক এবং নব্য অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্রের বেশ কয়েকজন স্মার্ট সদস্যও রয়েছে। যারা অনুষ্ঠানস্থলে অতিথি হয়ে প্রবেশ করে স্বর্ণালঙ্কার, গয়নার বাক্স, মোবাইল ফোন সেট আর নগদ টাকা লুট করে চম্পট দেয়। এ চক্রটি রাজধানীর নতুন অপরাধী গ্রুপ। রাজধানীতে নানা ধরনের চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ঘটলেও নতুন কৌশলে সংঘটিত এ অপরাধের সঙ্গে একেবারেই নতুন সংশ্লিষ্টরা। অভিজাত এলাকায় নতুন এ অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় এ নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়ে অনুষ্ঠান আয়োজক বর আর কনেপক্ষ। অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধী চক্রটিকে দুই পক্ষের আত্মীয় হিসেবে ঠেলাঠেলিতে তিক্ততার সৃষ্টি হয় নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্বজনদের মধ্যেও। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, অপরাধী চক্রটি বিয়ে বা বৌভাত অনুষ্ঠানে কখনো বরপক্ষ আবার কখনো কনেপক্ষের হয়ে ঢুকে যায়। বিনীতভাবে বরপক্ষের কাছে নিজেদের পরিচয় দেয় কনেপক্ষের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে। কনেপক্ষের কাছে পরিচিত হয় বরপক্ষের আত্মীয় হিসেবে। অনুষ্ঠানস্থলে আগ বাড়িয়ে টুকটাক কিছু দায়িত্বও পালন করে। তাদের দৌড়ঝাঁপ আর স্বজনসুলভ আচরণে বোঝাই যায় না এরা প্রতারক চক্রের সদস্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলে এ ধরনের প্রতারক চক্র ঢুকে পড়ে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। মানসম্মানের কারণে বিষয়টি প্রকাশ করতে চান না। তবে দামি মালামাল খোয়া যাওয়ার পরই আলোচনায় আসে বিষয়গুওলো।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর