শিরোনাম
শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কালুহাটি পাদুকাপল্লী বিশ্ব ছোঁয়ার স্বপ্নে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

কালুহাটি পাদুকাপল্লী বিশ্ব ছোঁয়ার স্বপ্নে

বড়াল নদের উৎপত্তিস্থল রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম কালুহাটি। উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা এখন বদলে গেছে পাদুকাশিল্পের সঙ্গে। শান্ত ও অপেক্ষাকৃত ছায়াঢাকা এ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে কুটিরশিল্পের আদলে গড়ে উঠেছে জুতা-স্যান্ডেলের কারখানা। ছোট ছোট টিনের ঘরে কারিগরদের নিরলস পরিশ্রম। কোনো দিকে তাকানোর ফুরসত নেই। নানা বয়সী মানুষ তৈরি করছেন বাহারি রঙের স্যান্ডেল ও জুতা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন দেশের বাইরেও   যাচ্ছে এখানকার তৈরি জুতা-স্যান্ডেল। বিশ্ব ছোঁয়ার স্বপ্নে কালুহাটির পাদুকাপল্লী। যেভাবে পাল্টে গেছে এই গ্রাম : স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় এক দশক পরেও এ কালুহাটি গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার ছিল নিম্ন আয়ের। ১৯৮০ সালে কালুহাটি পাদুকাপল্লী গড়ে তোলার প্রথম পরিকল্পনা করেছিলেন সুবেদার আমজাদ হোসেন। চাকরি সূত্রে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতা পুঁজি করে পথে নামেন তিনি। এরপর জুতা তৈরির প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আমিরুল, বারেক, কাশেম, দেলশাদ ও আমজাদ হোসেন ভৈরব যান। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষ করে কালুহাটি ফিরে দেলশাদ ও আমজাদ হোসেন দুজনের মালিকানায় ‘মুক্তা সু’ নামে একটি কারখানা চালু করেন। ১৯৮৫ সালের দিকে আমিরুলের মাথায় আসে, এ কাজ তারা গ্রামের মানুষকে শেখালে গ্রামের অভাব দূর করা সম্ভব। কিন্তু তখনো তার একটি আলাদা কারখানা করার মতো পুঁজি হয়নি। তিনি গ্রামের মানুষকে ব্যবসার সম্ভাবনার কথা বোঝালেন। ব্যবসা নিয়ে সে সময় আশঙ্কায় কেউ এগিয়ে আসতে চায়নি। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের বেকার যুবক নওশাদ আলী সরকার। তিনি কারখানায় পুঁজির জোগান দিলেন। একটি ঘর নিয়ে তারা কারখানা শুরু করেন। একটা সময় সৈয়দ নামের এক ব্যক্তিও কাজ করেন। শুরু হলো কাঁচামাল কিনে নিয়ে এসে জুতা-স্যান্ডেল তৈরি আর বাজারে বিক্রি। এভাবে দিন দিন ব্যবসার সম্ভাবনার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একে একে অনেকেই কাজ শিখতে থাকে। এই গ্রামের অনেকেই তার কাছে সরাসরি কাজ শিখেছেন। বর্তমানে আমিরুল সুজ নামে নিজের বাড়িতেই দিনরাত শ্রমিকসহ কাজ করেন এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কাজটা ভাগ্যের পরিবর্তন করে দিয়েছে। ভালো লাগে এখন সবাই এই কাজ করছে। আগে কেউ করতে চায়নি। আমাদের গ্রামটি এখন অনেক পাল্টে গেছে। চাহিদামতো ঋণ সুবিধা পেলে অনেকের উপকার হবে।’ বর্তমানে ছোট-বড় ৬৫টি পাদুকা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে কালুহাটিতে। নিউ মান্নান, ন্যাশনাল, ডায়মন্ড, শ্রাবণী, পায়ে পায়ে, শিশির, মেঘলা, রানা, সিয়াম, রাসেল, মডার্ন, দেশ, এমএফ, নাজ ওয়ান, রবিনসহ নানা নামের সু ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন ৫ হাজার শ্রমিক। এ ছাড়া গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি আরও ২ হাজার লোক জুতা তৈরির কাজ করেন। শুধু তাই নয়, পড়ালেখার পাশাপাশি অনেক ছাত্রও এসব কারখানায় কাজ করছে। কালুহাটি পাদুকাপল্লীর সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা জানান, তারা এখন স্বপ্ন দেখছেন কালুহাটির তৈরি জুতা-স্যান্ডেল বিশ^ বাজারে রপ্তানি হবে। সে জন্য স্থানীয় এমপির পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে কারিগরি প্রশিক্ষণ। এতে শ্রমিকরা দক্ষ হয়ে উঠলে পণ্যের মানও ভালো হবে। স্থানীয় এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, কালুহাটির পাদুকাপল্লীর মানুষদের মতো তারও স্বপ্ন এখানকার পণ্য বিদেশে রপ্তানি হোক। তিনি বলেন, ‘এখানে যে মানের জুতা-স্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে, তা এক দিন বিশ^বাজার জয় করবে। আমি সেভাবেই শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ করছি। এক দিন বাটা, এপেক্সের মতো বিশ^ ব্র্যান্ড হবে আমাদের কালুহাটির জুতা-স্যান্ডেল।’

সর্বশেষ খবর