বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডিজে পার্টি প্রেম খুন

মির্জা মেহেদী তমাল

ডিজে পার্টি প্রেম খুন

ডিজে পার্টিতে পরিচয়, প্রেম, অবশেষে হবু শ্বশুরকে খুন! মোবাইল ফোন সেট মেরামত করতে গিয়ে কণিকার সঙ্গে সৈকতের পরিচয়। আলাপ প্রসঙ্গে সৈকত জানতে পারেন কণিকা ডিজে পার্টিতে নাচ করেন।

কণিকা তাকে ডিজে পার্টিতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এর এক সপ্তাহ পর সৈকত ডিজে পার্টিতে গেলে কণিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়। এর পর থেকে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবে বছরখানেক প্রেম করার পর কণিকা জানতে পারেন সৈকত বিবাহিত। একদিন দুপুরে কণিকা হাজির হন সৈকতের বাড়িতে।

সৈকতের বাবা শাহ আলমের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। শাহ আলম একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছেলেকে ২০১১ সালে বিয়ে দেন। সৈকতের স্ত্রীর নাম নিতু। তাদের ঘরে একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। এসব তথ্য জানার পর কণিকার মন ভেঙে যায়। সৈকতকে বার বার চাপ দিতে থাকেন- ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করতে হবে।

এ খবর শুনে শাহ আলম ছেলেকে রক্ষা করার জন্য সৌদি আরব পাঠানোর ব্যবস্থা করতে থাকেন। পরে চার লাখ টাকা খরচ করে সৈকতকে সৌদি আরব পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

গত বছর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরব যাওয়ার কথা সৈকতের। এ খবর শুনে কণিকা তার প্রেমের পথের কাঁটা হিসেবে শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তার আরও তিন বন্ধুর সহযোগিতায় শাহ আলমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

লাশ লাগেজে ভরে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে নিয়ে যান নিরাপদ কোনো স্থানে ফেলে দেওয়ার জন্য। সবুজবাগ থানার বনশ্রীর পেছনে পূর্ব মাদারটেক প্রজেক্টের রাস্তায় সিএনজি থামিয়ে লাগেজ রেখে পালিয়ে যান কণিকা। এর পরই সবুজবাগ থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে এ হত্যার কূলকিনারা বের করে।

খিলগাঁও ঈদগাহ জামে মসজিদের সামনের একটি বাড়িতে শাহ আলম সপরিবারে ভাড়া থাকতেন। সৈকত খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের একটি দোকানে মোবাইল ফোন মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির বলেন, গত ৮ এপ্রিল পূর্ব মাদারটেক এলাকায় একটি অটোরিকশায় থাকা লাগেজ থেকে শাহ আলমের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে নিহতের পরিচয় না পেয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরদিন স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, শাহ আলমকে হত্যার আগে গোড়ানের ৩১ নম্বর টিনশেডের বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। ওই টিনশেড বাসায় কণিকা তার দাদি ও তিন ভাইবোনের সঙ্গে থাকেন। ঘটনার দিন রাতে কণিকা তার দূর সম্পর্কের দুলাভাই মনির ওরফে আলমগীরসহ দুজনকে ডেকে নেন ওই বাড়িতে। তারা তিনজন মিলে শাহ আলমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ লাগেজে ভরেন। এরপর সেই লাশ গুম করার জন্য কণিকা নিজেই একটি অটোরিকশা ঠিক করে রওনা হন। পথিমধ্যে লাগেজ রেখে পালিয়ে যান কণিকা। ডিবি কর্মকর্তারা আরও জানান, কণিকা লাশ ফেলে আসার পর বাসায় না ফিরে খিলগাঁওয়ের তার বান্ধবী মিথির বাসায় যান। ওই রাত মিথিদের বাসায় থাকার পর ভোরে সেখান থেকে বের হন। কাউকে কিছু না বলেই চলে যান যশোরের বেনাপোলে। বেনাপোলে পৌঁছেই নতুন একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে বান্ধবী মিথিকে ফোন করেন কণিকা। পরে পুলিশ সন্দেহবশত মিথিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

তার মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে বেনাপোল থেকে কণিকাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরই কণিকার বোন হীরা, ভাই অনীক ও তার ফুফু কুলসুমকে গোড়ানের বাসা থেকে আটক করে। এ ঘটনায় শাহ আলমের ছেলে সৈকতকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সবুজবাগ থানা পুলিশ জানায়, কণিকা খিলগাঁও মডেল কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী। ঘটনাচক্রে কণিকার সহপাঠী হলেন সৈকতের ছোট বোন নাসরিন জাহান মলি। বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে নাচ করে বেড়াতেন কণিকা।

নিহত শাহ আলমের মেয়ে মলি বলেন, কণিকা তার সহপাঠী। কিন্তু তার সঙ্গে বড় ভাইয়ের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি প্রথম দিকে জানতেন না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর