অভাব অনটনের সংসারে নকশী কাঁথা সোনা রানীকে এনে দিয়েছে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সম্মান। তার তৈরি নকশী কাঁথা দেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও রপ্তানি হচ্ছে। গৃহবধূ সোনা রানীর নকশী কাঁথা বাংলাদেশের মধ্যে সেরা অনন্যা-২০১৯ নির্বাচিত হয়েছেন। ২৩ মার্চ ঢাকায় তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হবে। ৩৫ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন তিনি। সোনা রানী দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সাইতাড়া (বানিয়াপাড়া) গ্রামের ননী গোপালের স্ত্রী। সোনা রানী ২০১৫ সালে কেয়ারের বিশেষ সম্মাননা স্মারক পুরস্কার লাভ করেন। তার তৈরি নকশী কাঁথা আমেরিকার নিউ ম্যাক্সিকো, নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলস্সহ বিভিন্ন স্থানে হস্তশিল্পের মেলায় অংশ নেয়। তিনি কেয়ার বাংলাদেশের রংপুরের বিভাগীয় কর্মকর্তা মিস্টার মিশাইলের সহযোগিতায় আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে আসেন। গত জানুয়ারি মাসে আমেরিকায় কেয়ারের এক সভায় যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন। তার স্বামী ম্যাকানিকের কাজ করেন। তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। সোনা রানী জানান, শ্বশুর মনোরঞ্জন মারা গেলে সংসারে অভাব অনটন নেমে আসে। চিন্তা করতে থাকি কি করা যায়। জানতে পারি পাশের পাড়ায় কেয়ার বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনেকে নকশী কাঁথা তৈরি করে। আমিও তাতে নাম লেখাই। প্রথম নকশী কাঁথাটি তৈরি করে ৭০০ টাকা পাই। এরপরে ওই নকশী কাঁথাটি কে তৈরি করেছে তা খুঁজতে থাকে তারা। নকশি কাঁথার কারুকার্যের কাজ নজরে পড়ে কেয়ার বাংলাদেশের রংপুরের বিভাগীয় কর্মকর্তা মিস্টার মিশাইলের। এরপরে কেয়ার লিভিং বুলু নামে একটি প্রকল্প চালু করে। এতে এলাকার মামুনী রায়, তাপসী রায়সহ ৩৫ জন নারী এ নকশী কাঁথা তৈরিতে কাজ করেন। নিজে নকশী কাঁথা সেলাই করলে ৭ হাজার টাকা এবং ওই ৩৫ জনের দেখভাল করার জন্য আরও ৪ হাজার টাকা পাওয়া যেত। তিনি আরও জানান, নিখুঁতভাবে এ নকশী কাঁথা সেলাই শিখেছেন নিজ বাড়িতে তার প্রয়াত মা চারুবালার কাছে। আর্থিক সুবিধা পেলে নকশী কাঁথাকে একটি শিল্প হিসেবে গড়ে তুলবেন। এ কাজে এ অঞ্চলের নারীদের উদ্বুদ্ধ করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যাবে এবং আরও নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। একটি নকশী কাঁথা বর্তমানে দেশে ৩ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।