বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সন্তান পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ দিচ্ছে কিনা তদারকে জাতীয় কমিটি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সন্তানের জন্য পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করার পর এবার সেই সন্তান সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না সেটি তদারক করতে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যার সভাপতি হবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী। এই কমিটির কার্যপরিধি ও দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হচ্ছে বিধিমালার মাধ্যমে। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া করা হয়েছে। আজ ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালা’র খসড়াটির বিষয়ে মতামত নিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী কমিটির সহসভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক। এ ছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত দুজন নারী সংসদ সদস্য (একজন সরকার ও একজন বিরোধীদলীয়), জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ সচিব, মহা পুলিশ পরিদর্শক বা তার মনোনীত অন্যূন উপপুলিশ পরিদর্শক পদ মর্যাদার কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, শিক্ষা, তথ্য এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, এনজিও প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত জাতীয় কমিটি পিতা মাতার ভরণ পোষণ বিষয়ক কার্যক্রম তদারকি, সমন্বয় সাধন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করবেন। এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সরকারকে পরামর্শ দেবেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত পরিচর্যা কেন্দ্র মনিটরিং করবেন এবং পিতা মাতার ভরণ পোষণ বিষয়ক তহবিল, বাজেট প্রণয়ন পরিকল্পনা ও বার্ষিক ব্যয় বিবরণী অনুমোদন দেবেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় কমিটি ছাড়াও স্থানীয়ভাবে পিতা মাতার ভরণ-পোষণের বিষয়গুলো তদারকির জন্য একইভাবে জেলা, উপজেলা এবং শহর কমিটি গঠন করা হবে। জেলা কমিটিতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শহর কমিটিতে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন। সূত্র জানায়, প্রবীণদের অসহায়ত্ব বিবেচনা করে এরই মধ্যে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩ পাস করেছে সরকার। এ আইনে পিতা-মাতা, দাদা-দাদি এবং নানা-নানীর ভরণ-পোষণ করা সন্তানের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব। অন্যথায় তাদের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। যদি কোনো প্রবীণ তার সন্তানদের বিরুদ্ধে ভরণ পোষণ না করার অভিযোগ আনেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সন্তানদের এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের ৩ ধারায় আরও বলা হয়, কোনো সন্তান তার বাবা বা মাকে অথবা উভয়কে তার বা ক্ষেত্রমতো তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদাভাবে বাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। তা ছাড়া সন্তান তার মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা করবে।  কোনো সন্তানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে বা নিকটাত্মীয় যদি বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয় তাহলে তারাও একই অপরাধে অপরাধী হবে। ফলে তারাও একই শাস্তির মুখোমুখি হবে। এ আইনের মাধ্যমে বাবার অবর্তমানে দাদা-দাদি এবং মায়ের অবর্তমানে নানা-নানীরও ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। ভরণ-পোষণ বলতে খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদান করতে আইনে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর