শনিবার, ১১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিপর্যস্ত খিরুর কান্না

নদী বাঁচাও ৫৯

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

একসময় খিরু নদী ছিল ভালুকার আশীর্বাদ। হরেক রকমের মাছ মিলত। খিরুর বুক চিরে চলাচল করত লঞ্চ ও পালতোলা নৌকা। পানি ছিল স্বচ্ছ টলমলে। সেচনির্ভর ছিল এই পানি। নদীর দুই পাড়ের মানুষ গোসল করত খিরুতে। সেই খিরুর বুকজুড়ে এখন শুধুই হাহাকার। খিরুর পানির দিকে তাকানোর জো নেই। পানি এখন প্রচন্ড দুর্গন্ধযুক্ত, ধারণ করেছে কালচে বিবর্ণ রং। নদীটি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ বিষাক্ত। খিরুর বুকজুড়ে এখন শুধুই কান্না। খিরু নদী যেন স্মৃতিময় দীর্ঘশ্বাস। দূষণে-দখলে-বর্জ্যে হয়ে উঠেছে বিপর্যস্ত। খিরুর শাখা-প্রশাখার জায়গা সংকুচিত হয়ে যাওয়া দেখলে মনে হবে, যেন কোনো এঁদো ডোবা। এক সময়ের মিষ্টি পানির নদী খিরুর বর্তমান অবস্থা এমনই। অবৈধ দখল ও শিল্প-কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। এলাকার কৃষক নিরুপায় হয়ে এই বিষাক্ত পানি দিয়েই চালাচ্ছেন চাষাবাদ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে নদীতে মাছ তো দূরের কথা, ব্যাঙের দেখা মেলাও দুষ্কর। সরেজমিন নদীর দিকে তাকালেই দখলবাজির মাত্রাটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জবরদখল প্রক্রিয়া থামাতে মাঝেমধ্যে সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও নানা সীমাবদ্ধতায় থমকে দাঁড়ায়। প্রভাবশালী দখলবাজরা থাকে অপ্রতিরোধ্য। নদীর পাশ দিয়ে গেলেই রাসায়নিক পদার্থের তীব্র কটু গন্ধ নাকে লাগবে যে কারও। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পড়তে পড়তে নদীর পানি একদম পচে গেছে। বহুদূর পর্যন্ত পানির এ দুর্গন্ধ গিয়ে নাকে লাগে। জানা যায়, প্রায় দেড় যুগ ধরে তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। দিন দিন অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। আগে সব কাজে মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করত। গোসল করত। এখন গোসল তো দূরের কথা, এ পানিতে হাত লাগলেই অসহ্য চুলকানি হয়। নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় পাশের গ্রামে টিউবঅয়েল দিয়ে তোলা পানিতেও কটু গন্ধ থাকে। টিউবঅয়েল বেশি গভীর করে না বসালে পানি খাওয়া যাচ্ছে না। বয়ডা গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নদীপাড়ের বিশাল এলাকার দু-তিন ফসলি জমি একফসলি হয়ে গেছে।

শুধু বোরো ধান ছাড়া এখানে অন্য কিছু হয় না। কারণ অন্য সময়ের ফসল এ পচা পানি সহ্য করতে পারে না। এ কারণে খিরু নদীর দুই তীরের মানুষের আয় কমে গেছে। তারা জানান, জমিতে বাধ্য হয়েই নদীর পানি ব্যবহার করতে হয়। তারা এখন জমিতে চাষ করে যে পরিমাণ ফসল পান, যদি পানি ভালো থাকত তাহলে এখানে দুই গুণ বেশি ফসল পেতেন। পচা পানির কারণে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর