জাতীয় নির্বাচনের পর চার ধাপে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির তৃণমূলের বেশকিছু নেতা অংশ নেন। এর মধ্যে ১৮০ জন নেতাকে ‘শৃঙ্খলাবিরোধী’ কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুধু উপজেলা ভোটে অংশ নেওয়ার জন্যই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তাদের পক্ষের কর্মী-সমর্থকরাও হতাশ ও ক্ষুব্ধ। দলীয় প্রতীক ছাড়া ভোটে অংশ নেওয়ার ছোট ভুলে তাদের বড় শাস্তি দেয় কেন্দ্র।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুলভ্রান্তিকে বলা হচ্ছে রাজনৈতিক কৌশল। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর বিএনপি এ সরকার ও সংসদকে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যা দেয়। এরপর গুটিকয়েক নির্বাচিত সংসদ সদস্য শপথ নিয়ে পার্লামেন্টেও যান। তবে শপথ নেননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের হাইকমান্ড থেকেই বলা হচ্ছে, এ নিয়ে তাদের কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে। তবে এটাকে তারা আবার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও মনে করছেন। তৃণমূল বিএনপির নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুলভ্রান্তিতে কোনো শাস্তি হয় না। বরং তারা ভুলকে রাজনৈতিক কৌশল বলে চালিয়ে দেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ের নেতাদের ছোটখাটো ভুলে বড় ধরনের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এতে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। সামনে আরও একধাপ উপজেলা নির্বাচন রয়েছে। সেখানেও তৃণমূলের নেতাদের ওপর বহিষ্কারের খড়গ নামতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূলের বেশকিছু নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মূলত তারা উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অংশ নিয়েছিলেন। পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের আরও একধাপ বাকি আছে। এরপর দলই সিদ্ধান্ত নেবে তাদের ব্যাপারে করণীয় কী? দলের হাইকমান্ড চাইলে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও হতে পারে। আবার নাও পারে।’ তবে বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতারা নিয়ম মেনে আবেদন করলে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে আরও একধাপ নির্বাচন রয়েছে। এরপর বিএনপি এ ব্যাপারে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর মধ্যে বগুড়া বিএনপির দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। বাকি নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে কিছুদিন সময় লাগবে বলেও জানান ওই নেতা। জানা গেছে, তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কারের পর থেকেই দলের ভিতরে বাইরে-সমালোচনার ঝড় বইছে। ঠুনকো ঘটনায় দলের প্রাথমিক সদস্য থেকেও বাদ দেওয়া বিএনপির একটি অংশ ভালোভাবে দেখছেন না। তারা বলছেন, দলে এখন চরম দুঃসময় চলছে। এর মধ্যে তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। রাজনৈতিক বড় বড় ভুল সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতারা নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কথায় কথায় শুধু তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কার করা ভালো নজির নয়। কারণ ওয়ান-ইলেভেনসহ বিগত দুঃসময়ে তৃণমূল নেতারাই বিএনপি ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আগলে রেখেছিলেন। তাদের পুরষ্কৃত না করে বহিষ্কার খুবই দুঃখজনক। বিএনপির মধ্য সারির এক নেতা বলেন, ‘এসব বহিষ্কার একটি খেলা। এই সুযোগে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়বে। বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়ার কথা বলে তারা সংশ্লিষ্ট নেতার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেবে। অতীতেও তাই হয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ইউপি, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনেও অন্তত দুই শতাধিক মাঠের নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ৯০ ভাগের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু আর্থিকসহ নানাভাবে খেসারত দিতে হয় সংশ্লিষ্ট নেতাকে।’ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘দল থেকে বহিষ্কার হলেও দলের নেতা-কর্মীরাই আমাকে ভোট দিয়েছে। অবশ্যই আমি দলে ফিরব। স্বপদে ফিরতে আমি মহাসচিব বরাবর আবেদন করব। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আশা করি, দলে ফিরতে কোনো সমস্যা হবে না।’ নড়াইল সদর উপজেলা থেকে নির্বাচন করেন নড়াইল জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বাবু অশোক কুমার কুন্ডু। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি জানান, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে আমি শুরুতে শুনেছিলাম, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা যাবে না। তাই আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছি। এ নিয়ে আমি দলের কাছে আবেদন করব।’ পঞ্চগড় সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু দাউদ প্রধান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখন এমন এক পরিস্থিতিতে আছি, রাজনীতি করার ইচ্ছাও নেই। রাজনীতি করতে গেলে যে নোংরা খেলা খেলতে হয়, সেটা আর পারব না। দলের কেউ কেউ বলছেন, আমাকে আবেদন করতে। কিন্তু আমার আর আবেদন করার ইচ্ছাও নেই।’
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        