শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিনা দোষে জেল খাটা সেই সজল খালাস ওসিকে শোকজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

অবশেষে আদালতের নির্দেশে খালাস পেয়েছেন সজল। বড় ভাই ফজলের পরিবর্তে পুলিশ সজলকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল। গতকাল দুপুরে আদালতে শুনানি শেষে সজল নির্দোষ প্রমাণিত হন। এরপর রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে (প্রথম) বিচারক মনসুর আলী সজলকে খালাসের নির্দেশ দেন। আদালত একই সঙ্গে নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোয় নগরীর শাহমখদুম থানার ওসিকে শোকজ করেছে। তাকে সাত দিনের মধ্যে জবাবদিহি করতে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী সজল মিয়ার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর ছোট বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া মহল্লায়। তার বাবার নাম তোফাজ উদ্দিন। সজলের বড় ভাইয়ের নাম সেলিম ওরফে ফজল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক। তার অনুপস্থিতিতেই ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট মামলার রায় হয়। সেদিন খালাস পান অন্য চার আসামি। দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ৩০ এপ্রিল সজলকে গ্রেফতার করে নগরীর শাহমখদুম থানা পুলিশ। সেদিন তাকে ফজল হিসেবেই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গত ২৬ মে সজল তার আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, আসামি বড় ভাইয়ের পরিবর্তে তিনি জেল খাটছেন। এ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু বিচারক মনসুর আলীর একজন নিকাটাত্মীয় মারা যাওয়ায় মঙ্গলবার আদালত বসেনি। তবে সজলের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিচারক গতকালই শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। শুনানি শেষে সজলকে নির্দোষ বলে রায় দেন বিচারক। মুক্তির আদেশ পাওয়ার পর সজল মিয়া বলেন, ‘আমি শুধু জানি বড় ভাইয়ের মামলাটা ছিল নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের। কিন্তু কেন মামলাটা হয়েছিল সেটাও জানি না। আমি ডাব বিক্রি করতাম। পুলিশ আমাকে বিনা দোষে জেলে পাঠিয়েছে। জেলে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে হয়েছে।

 ‘এমবি-৪’ নম্বর ওয়ার্ডে থাকি। জেলে পুরনো কয়েদিদের বড় যন্ত্রণা। তারা খুব খারাপ আচরণ করে। বিনা দোষে এসব সহ্য করতে হয়েছে। আজ সঠিক রায় পেলাম। এখন পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করব।’ সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা জানান, অপরাধী না হয়েও সজল সাজা ভোগ করেছেন। পুুলিশ ভুল করে অথবা বাদীপক্ষের কাছে প্রভাবিত হয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার সজল যে আসামি নন তার সব প্রমাণ তাদের কাছে ছিল। আদালতে সেগুলো তারা উপস্থাপন করেছেন। আদালত সব প্রমাণপত্র দেখে সজলকে মুক্তির আদেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে কেন নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলো- তা জানতে চেয়ে নগরীর শাহমখদুম থানার ওসিকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে। সজল আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় এখন ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করা হবে। নগরীর শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ উল্লেখ করেন, তিনিও চান না যে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি সাজা খাটুক। আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর