বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বৈরুতের বাঙালি বাজারে প্রবাসীদের মিলনমেলা

শিমুল মাহমুদ, বৈরুত (লেবানন) থেকে

বৈরুতের বাঙালি বাজারে প্রবাসীদের মিলনমেলা

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সাবরা বাজার যেন এক খ-  বাংলাদেশ। প্রতি রবিবারসহ অন্য ছুটির দিনগুলোতে হাজারো মানুষের ঢল নামে বৈরুতের এই সাবরা বাজারে। লেবাননের দূর-দূরান্ত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রয়োজনের চেয়েও বেশি প্রাণের টানে জড়ো হন এই বাজারে। প্রায় ৪০-৫০ জন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী লেবাননের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবজি, মাছসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল নিয়ে অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসেন এই সাবরা বাজারে। মাসিক ভাড়া বাবদ প্রতিটি অস্থায়ী দোকানকে ৭০ থেকে ৮০ মার্কিন ডলার ভাড়া দিতে হয় বাজার কমিটিকে। এ ছাড়া লেবানিজদের কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে হোটেল, দর্জি, মুদিমাল, সেলুনসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এই সাবরা বাজারে বাংলাদেশের এমন কোনো পণ্য নেই যা পাওয়া যায় না। গত রবিবার বিকালে সাবরা বাজারে গিয়ে দেখা যায় বাঙালিদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশ দুজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে গেছে। যদিও অল্প সময় পরই তাদের ছাড়িয়ে আনেন দোকানের লেবানিজ মালিকরা। বাজারের দিন এসব দোকানের জায়গার মালিকরা দোকানের সামনেই চেয়ার নিয়ে বসে থাকেন। পুলিশি ঝামেলা তারাই সামলান। আসলে হাজার হাজার বাঙালির মিলনস্থল এই বাজারে বৈধ কোনো বাঙালি ব্যবসায়ী নেই। লেবাননে বিদেশিদের ব্যবসা করা সহজ কোনো কাজ নয়। পুরো লেবানন জুড়ে মোহাম্মদ ইসমাইল নামে একজন বাঙালি ব্যবসায়ী বৈধভাবে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করে থাকেন তার লেবানিজ পার্টনারের সঙ্গে মিলে। তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বাংলাদেশি সব পণ্য পাওয়া যায় লেবাননে। চট্টগ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল জানান, তিনি আগে দুবাইয়ে ব্যবসা করতেন। সেখান থেকেই লেবাননে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। সাবরা বাজারে শুধু প্রবাসী বাঙালিদের জন্যই গড়ে উঠেছে হোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন মুদি মালের প্রায় ২০টি স্থায়ী দোকান। এসব দোকানে বাংলাদেশের স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই, কিশোয়ান, বনফুলসহ অনেক কোম্পানির নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। এখানে পাওয়া যায় চাল, ডাল, তেল, হলুদ, মরিচ, জিরা, প্রাণের আচার, ড্রাইকেক, চিকন সেমাই, দুধ, আছে তেজপাতা, ছোলা বুট, বিভিন্ন ধরনের মসলা, বনফুলের লাচ্চা সেমাই, মোয়া, চিড়ার লাড্ডু, কেয়া লিপজেল, মমতাজ মেহেদি, লিজান মেহেদি, পান, সুপারি, জর্দ্দাসহ আরও কতকিছু। শাক-সবজির মধ্যে করলা, ভেি , মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, লাউ, ডাঁটা, পুঁইশাক, লালশাক, কাঁচামরিচ, বেগুন, টমেটোসহ অনেক কিছু পাওয়া যায়। লেবাননে শুধু বাঙালিদের চাহিদার সবজি চাষ করেই কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি কোটিপতি হয়ে গেছেন। বরিশালের গাজী রফিক সাবরা বাজারে খাবার হোটেলের ব্যবসা করেন দীর্ঘদিন থেকে। ‘মা হোটেল’ নামের এই খাবার দোকানে বসে তিনি বলেন, প্রতি রবিবার হাটবারে ভালো ব্যবসা হয়। অন্যদিন বাঙালিদের সংখ্যা এত বেশি থাকে না। শনিবার বিকাল থেকেই অস্থায়ীভাবে মাছ, সবজি ইত্যাদি নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসতে থাকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। অনেকে অনেক দূরবর্তী স্থান থেকে এই বাজারে আসেন পরিচিতজনদের সঙ্গে দেখা হবে বলে।

 আসলে নামে বাজার হলেও এটি মূলত লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেক আকাক্সিক্ষত একটি মিলনস্থল।

সর্বশেষ খবর