বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাঁচ ধাপে ১৪৩ উপজেলায় নৌকার পরাজয়

নৌকাবিরোধী এমপি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে আওয়ামী

রফিকুল ইসলাম রনি

দলের এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের বিরোধিতায় পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে হেরেছে ১৪৩ নৌকা। গত মঙ্গলবার শেষ ধাপের ২০ উপজেলার মধ্যে ৯টিতে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। নৌকাকে হারাতে যেসব এমপি-মন্ত্রী ও নেতার হাত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। গতকাল দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমন আভাস দিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা নির্বাচন। পাঁচ ধাপের নির্বাচনে ১৪৩টি উপজেলায় নৌকার প্রার্থীরা হেরেছেন। অথচ বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো এবার ভোটের মাঠে ছিল না। অনেকটা একতরফা এই নির্বাচনেও বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। গত মঙ্গলবার পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এতে ৯ জন দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের নেপথ্যে সাবেক এক মন্ত্রীসহ ৩ জন দলীয় এমপির সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রগুলো জানায়, বিএনপির বর্জনের কারণে উপজেলা নির্বাচনকে জমজমাট করতে এবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের অন্যদেরও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দেয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় এমন সিদ্ধান্তের পর পক্ষপাতিত্ব শুরু করেন দলের এমপি-মন্ত্রীরা। নৌকার প্রার্থী পছন্দের না হলেই বিরোধিতা শুরু করেন তারা। শুধু বিরোধিতাই নয়, কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপি নৌকার বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি প্রচারণায় শামিল হন। অনেকে আবার নৌকার প্রার্থী ও প্রশাসনকেও নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে নৌকার পরাজয় নিশ্চিত করেন। উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপিদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোটের মাঠে তাদের কার্যকলাপ ভালোভাবে নেননি তিনি। ওই সব মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, খুবই কষ্ট পাই, যখন দেখি নেত্রী মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, আর সেই প্রার্থীকে বাদ রেখে দলের এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা অন্য প্রার্থীকে সাপোর্ট দেন। নেক্সট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে। এর ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পঞ্চম স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক উপজেলাতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা হেরেছেন। নির্বাচনে যেসব এলাকায় নৌকা হেরেছে সেগুলো হলো- শেরপুরের নকলা, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, মাদারীপুর সদর, রাজবাড়ীর কালুখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও খুলনার ডুমুরিয়া। এর আগে ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ময়মনসিংহের ৮টি উপজেলার মধ্যে ৬টিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা হেরে যান।  খুলনার ৬টির মধ্যে ৪টি। টাঙ্গাইলের ৪টি। কুমিল্লায় ২টিতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২টি, মুন্সীগঞ্জের ২টিতে, পটুয়াখালীর ১টি, ভোলার ১টিতে ও ঢাকার ১টি। এর আগে তৃতীয় ধাপে লক্ষ্মীপুর ৩টি। কক্সবাজারের ৪টি উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগে দলীয় প্রতীকের প্রার্থীরা। 

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, নৌকার বিরোধিতাকারী এসব মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এসব অভিযোগ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী-এমপির তালিকা এখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে। একাধিক সূত্র জানায়, পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে। বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। জেলা-উপজেলার রাজনীতি ও সাংগঠনিক কর্মকা ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক উপজেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।

সর্বশেষ খবর