শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাহাড়ধসে আতঙ্ক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

তিন দিনে ছোট-বড় ৪০ ধস, ঘরবাড়ি ভেঙেছে শতাধিক

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

পাহাড়ধসে আতঙ্ক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

কক্সবাজার উখিয়া ময়নারঘোনা পাহাড় সংলগ্ন বালুখালি-২ এর আশপাশে ছোট-বড় প্রায় ১৫টি পাহাড় আছে। গত ১১ জুলাই বালুখালির ১১ নম্বর ক্যাম্পে পাঁচটি পাহাড়ধস হয়। তা ছাড়া সম্পূর্ণ ভেঙে যায় একটি ঘর এবং আংশিক ভাঙে ৩৪টি। ১০ জুলাই ছোট পাহাড়ধস হয় ৩টি, সম্পূর্ণ ঘর ভেঙে যায় ২টি এবং আংশিক ভাঙে ১৪টি। ৯ জুলাই বড় আকারে পাহাড়ধস হয় একটি এবং ছোট ধস হয় ১৩টি এবং সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায় দুটি ঘর ও আংশিক ভাঙে ১৯টি। ৮  জুলাই বড় আকারে পাহাড়ধস হয় ৩টি ও ছোট আকারে ধস হয় ১৫টি। সম্পূর্ণ ঘর ভাঙে ৩টি ও আংশিক ভাঙে ৬৩টি। বালুখালি-২ এ কর্মরত বিভিন্ন উন্নয়নকর্মী এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। তবে গত বছর বর্ষার পুরো বৈরী মৌসুমে যা ক্ষতি হয়েছিল, এ বছর ১০ জুলাই পর্যন্ত তার দ্বিগুণ ক্ষতি হয়েছে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়। বিভিন্ন তাঁবুতেই প্রবেশ করেছে পানি। কোথাও নিজ উদ্যোগ, কোথাও উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে তাঁবু মেরামতের কাজ করছে বলে জানা যায়। ফলে অন্তহীন দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। কখন পাহাড়ধস হচ্ছে এ শঙ্কায় থাকতে হচ্ছে প্রায় সবাইকে। প্রায় সব পাহাড় থেকেই প্রতিনিয়ত ধসে পড়ছে মাটি। অতিবর্ষণে পাহাড়গুলোর মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো পাহাড়ে মাটি ধসের ঘটনা ঘটছে। ফলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ওপর এবং পাদদেশে বাস করছে রোহিঙ্গারা।  বালুখালি-২ এর একশন এইডের কো-অর্ডিনেশন অফিসার শওকত হাসান বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ছে। ইতিমধ্যে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অনেককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু পরিবারকে পুনর্বাসনও করা হয়েছে। তবে আরও অনেককে সরিয়ে নেওয়া দরকার।’ এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)-এর প্রতিবেদন মতে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ২০১৮ সালের দুর্যোগপূর্ণ মৌসুমে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়ায় ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের বর্ষা মৌসুমে গৃহহীন হয়েছিল ৬ হাজার ২০০ মানুষ। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৬০০ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসেই  দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৯ হাজার মানুষ। কিন্তু এ বছরের জুলাই মাসের প্রথম ১০ দিনেই প্রায় ২২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) বলছে, গত ৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আইওএম ক্যাম্পে থাকা ৯৯৮ জন মানুষ এবং ৯১২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি মাটির ঘর ধস, ৮টি ঝড়ো হাওয়ায় ১৭৪ জন মানুষ গৃহহীন হয়েছে বলে রেকর্ড করা হয়।  আইওএম বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে ক্যাম্পের দুঃখ-দুর্দশা অবর্ণনীয় হারে বাড়ছে। আইওএমের ক্যাম্পে থাকা প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে জরুরি সাহায্য প্রদান করেছে। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রায় ৫ হাজার ৭৯টি প্লাস্টিক ত্রিপল বিতরণ করা হয়।’  গত ৪ জুলাই থেকে টানা বর্ষণের কারণে দেখা দিয়েছে পাহাড়ধসের শঙ্কা এবং সড়কগুলো হয়ে ওঠে চলাচল অনুপযোগী। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘অতিবর্ষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে ইতিমধ্যে অনেককে অন্যত্র সরানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে মাইকিং অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, উন্নয়ন সংস্থাসহ সব মহলকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।’ পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরাতে আমরা প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালনা করি। গত বৃহস্পতিবারও দুটি পাহাড়ে অভিযান পরিচালিত হয়। তাছাড়া ওই সব পাহাড়ে থাকা পরিবারগুলোকে বিপদ এড়াতে অন্যত্র চলে যেতেও বলেছি।’

সর্বশেষ খবর