শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্ষমতাসীনরা ব্যস্ত নিজের পেশায়

পুলিশি বাধায় পথে নামতেই পারছে না বিএনপি

মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু, বরগুনা

ক্ষমতাসীনরা ব্যস্ত নিজের পেশায়

বরগুনার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন যার যার পেশা নিয়ে ব্যস্ত। দলীয় অনেক কর্মসূচিতেই জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক ম-লীর অনেক নেতাকেই দেখা যায় না। বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলীয় কর্মসূচির সমর্থনে রাজপথে নামতে পারছে না পুলিশি বাধার কারণে। দলীয় কার্যালয় চত্বরেই তাদের কর্মসূচি শেষ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের জেলা উপজেলা কমিটি রয়েছে নামমাত্র। সিপিবি, ন্যাপ, জাসদের অবস্থা আরও করুণ।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দুই ভাগে বিভক্ত : বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কারও কারও ভাষায় বরগুনা দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর। জেলা কমিটিতে ৪র্থ বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য (বরগুনা ১ আসন) অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং ৪র্থ বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির। জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ২ জনসহ ১৫-২০ জন নেতাকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গেলেও অন্যদের তেমন একটা দেখা যায় না। দলের সব নেতারাই ব্যস্ত স্ব-স্ব পেশা নিয়ে। বরগুনাসহ ৪টি পৌর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক সুবল কৃষ্ণ তালুকদার বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড, উপজেলা ও পৌর কমিটির পুনর্গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সাংগঠনিক সব কমিটি গঠন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং এ বছরের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পরে জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। যার প্রভাব তৃণমূল পর্যায় পৌঁছে গেছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বর্তমান সভাপতি ও সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শ¤ভু ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃতে¦ বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকা কে কেন্দ্র করে এই গ্রুপিং আরও জোরালো হয়েছে। দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি : বরগুনা জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মোল্লা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন অ্যাড. আবদুল হালিম। বরগুনায় বিএনপির মধ্যেও রয়েছে দলীয়  কোন্দল। সাবেক সভাপতি মাহাবুবুল আলম ফারুক মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীরা এখনো বর্তমান কমিটিকে মেনে নিতে পারেননি। দলীয় সভা সমাবেশ ও কর্মসূচিতে ফারুক মোল্লাসহ তার সমর্থকদের উপস্থিতি দেখা যায় না।  জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহাবুবুল আলম ফারুক বলেন, জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটি গঠন করা হয়েছে অসাংবিধানিকভাবে। আমরা যারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি তাদের মূল্যায়ন না করায় বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবদুল হালিম বলেন, আমাদের ৬টি উপজেলার মধ্যে যেসব উপজেলা ও ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের মধ্যেই কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। হ-য-ব-র-ল অবস্থায় জাতীয় পার্টি : বরগুনায় জাতীয় পার্টির অবস্থা হ-য-ব-র-ল। ১০১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠনের দীর্ঘ দেড় বছরেও কোনো সভা হয়নি। জেলা জাপা সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ মাতুব্বর বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিগুলো বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নিদের্শনা পেলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মনছুর বলেন, বরগুনায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য শিগগিরই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা ডাকা হবে। আগের অবস্থানে নেই ইসলামী আন্দোলন : ইসলামী আন্দোলন এক সময় সাংগঠনিক দিক থেকে শক্তিশালী থাকলেও বর্তমানে আগের মতো অবস্থা নেই। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল জেলা সম্মেলনে মাওলানা মো. অলি উল্লাহকে সভাপতি ও মাওলানা জাকির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৬ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠন করা হয়।

সর্বশেষ খবর